দেশ বিভাগে ফিরে যান

নাগাল্যান্ড হত্যাকাণ্ডের পর অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি সংসদে, দেশজুড়ে

December 7, 2021 | 2 min read

উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। কোণঠাসা মোদী সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফা দাবি। সংসদ থেকে মানবাধিকার কমিশন—নাগাল্যান্ডে বাহিনীর গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যু সর্বত্র তোলপাড় ফেলেছে। প্রবল চাপে কেন্দ্র স্বীকার করেছে, নাগাল্যান্ডে যা ঘটেছে, সেটা ভুল। সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হচ্ছে। দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে। এরপরও কিন্তু আশ্বাসে কাজ হচ্ছে না। মিটছে না ক্ষোভের আগুন। নাগাল্যান্ড তো বটেই, উত্তর-পূর্ব ভারতজুড়ে আবার আফস্পা (আর্মড ফোর্সের স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট) এবং অভিযানের নামে সামরিক বাহিনীর যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিবাদ।

মিজোরাম বনাম অসমের পুলিস বাহিনীর তীব্র সংঘর্ষের রেশ এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই মাথাচাড়া দিয়েছে নাগাল্যান্ড। সংসদের অন্দরে এবং বাইরে বিরোধীরা চেপে ধরেছে সরকারকে। শরিক মহলেও খুব স্বস্তিতে নেই মোদি সরকার। আর তাই ড্যামেজ কন্ট্রোলে সোমবার দিনভর সেনাবাহিনী থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক—দফায় দফায় চলেছে দুঃখপ্রকাশের পালা। সংসদে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ‘নাগাল্যান্ডের ঘটনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ক্ষমাপ্রার্থী। নিহত প্রত্যেকের পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা।’ এই বিবৃতিই অবশ্য শেষ নয়। নাগাল্যান্ড সরকারের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে আসরে। আনা হয়েছে খুনের চার্জ। এছাড়া মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসারকে মাথায় রেখে সেনাবাহিনীর বিশেষ তদন্ত তো আছেই। ক্ষোভ কি তাতে প্রশমিত হয়েছে? না হয়নি। কারণ, এদিনও নাগাল্যান্ডের প্রতিটি প্রান্তে ছিল নিঃশব্দ প্রতিবাদ। কারও হাতে আফস্পা বাতিলের দাবিতে প্ল্যাকার্ড, কারও হাতে মোমবাতি। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানে লাগাতার আফস্পার জয়গান গেয়ে যাওয়া মোদী সরকার তাই বিস্তর চাপে। স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাই সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করতে হয়েছে, ‘আত্মরক্ষার খাতিরে বাহিনীকে গুলি চালাতে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অভিযান চালানোর সময় এমন ঘটনা আর যাতে না হয়, তার জন্য দেশের তাবৎ নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক করেছে সরকার।’

বিরোধীরা অবশ্য নিছক দুঃখপ্রকাশ মানতে নারাজ। অমিত শাহের বিবৃতির পর বিরোধীরা ওয়াক আউট করে। সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধীদের একাংশ। তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেব বলেছেন, ‘দেশের মানুষের সুরক্ষা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বিজেপি আর ইডি-সিবিআইয়ের সুরক্ষা নিয়ে চিন্তিত। উত্তর-পূর্ব তথা বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অশান্তি বেড়ে চলেছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপই নিতে পারছেন না!’ অমিত শাহের যুক্তি, ‘একটি গাড়ি প্রবল গতিতে যাচ্ছিল। তাকে থামতে বলে বাহিনী। তারা থামেনি। সেই কারণেই জওয়ানদের সন্দেহ হয়, গাড়িতে সন্ত্রাসবাদীরা রয়েছে। তারপরই গুলি চালায় তারা। পাশাপাশি এই ঘটনার পর সেনা শিবিরেও হামলা চালায় প্রায় ২৫০ জন। তখন আত্মরক্ষার জন্যই গুলি চালাতে হয় বাহিনীকে। তবে দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির পরও শান্ত হয়নি বিরোধীরা। প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যে গাড়িতে সাধারণ মানুষ কাজ সেরে ফিরছিল, তাতেই সন্ত্রাসবাদী আছে—এরকম একটি মারাত্মক ভুল ইনপুট গোয়েন্দারা দিলেন কেন? কোন গোয়েন্দা বিভাগ এই বার্তা দিয়েছিল? তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? অবিলম্বে আফস্পা আইন নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি করেছে বিরোধীরা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সরাসরি নোটিস পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তাতে সাফ বলা হয়েছে, ৬ সপ্তাহের মধ্যে নাগাল্যান্ডের ঘটনার রিপোর্ট দিতে হবে।
নাগাল্যান্ডে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। এই প্রতিবাদ কিন্তু আর সহজে প্রশমিত হবে না। ওল্ড এমএলএ জংশনে সোমবার হাজার হাজার মানুষের জমায়েত তারই প্রমাণ। নাগাল্যান্ড তো বটেই… দেশজুড়ে আজ দাবি একটাই—বিচার চাই!

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Parliament, #Amit shah, #Nagaland, #Nagaland firing

আরো দেখুন