চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অসহযোগীতার অভিযোগ বঙ্গ বিজেপি বিধায়কদের
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য আগেই উঠে এসেছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে। মোদী মন্ত্রিসভায় বঙ্গ বিজেপি প্রতিনিধিদের ব্যর্থতাকে গত বিধানসভা ভোট বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিল সঙ্ঘ। সেই পর্যবেক্ষণ একশো শতাংশ নির্ভুল, তা এবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন বিজেপি বিধায়করা। গেরুয়া বিধায়কদের বড় অংশের অভিযোগ, রাজ্যের চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁদের বিশেষ পাত্তা দেন না। তাঁরা এমএলএ’দের ফোন ধরেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। সার্বিকভাবে বিজেপি বিধায়কদের তোপের মুখে কেন্দ্র সরকারে থাকা দলেরই চার প্রতিনিধি। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা অধিবেশনের ঘরোয়া বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারীকে অভিযোগ জানিয়েছেন একাধিক বিধায়ক। দলীয় স্তরে বিষয়টি জানানো হলেও, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সবমিলিয়ে দলের বিধায়করাই বাংলার চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ। সেখানে রাজ্যবাসীর উন্নয়নে এই গেরুয়া জনপ্রতিনিধিদের কার্যকারিতা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
উত্তরবঙ্গের একাধিক বিজেপি বিধায়কদের দাবি, আমাদের তেমন কাজই নেই। রাজ্য সরকার এবং জেলা প্রশাসন এলাকা উন্নয়নের কাজে অসহযোগিতা করে। আমরা ভেবেছিলাম, কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পকে সাধারণ মানুষের কাজে ব্যবহার করব। রেল, বন্দর, ফারাক্কা ব্যারেজ, এনটিপিসি’র মতো বহু সংস্থা রয়েছে। যার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এলাকায় কাজ করতে পারি। কিন্তু কেন্দ্রের অন্যান্য মন্ত্রী তো দূরস্ত, বাংলা থেকে মন্ত্রী হয়ে যাঁরা দিল্লি গিয়েছেন, তাঁরাই সহযোগিতা করছেন না। বিষয়টি সম্প্রতি শুভেন্দুদাকে জানিয়ে ছিলাম। তিনি দিল্লিতে ফোন করে দেবেন বলেছিলেন। আমাদের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। দক্ষিণবঙ্গের আরও কিছু বিধায়কের কথায়, বাংলার চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। আমাদের ৭০ জন বিধায়ককে বিবিধ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুফল মানুষের কাজে লাগানোর কোনও চিন্তাভাবনা নেই। ওই বিধায়কদের দাবি, গনিখান চৌধুরি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন বাংলার জন্য অনেক কিছু করেছেন। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সিও রাজ্যের স্বার্থে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দিল্লি থেকে বাংলার জন্য প্রকল্প কিংবা তহবিল ছিনিয়ে আনার কোনও উদ্যোগই বঙ্গের চার মন্ত্রীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এই মন্ত্রীরা কেবল গাড়ি চড়ে বেরাচ্ছেন আর এসি ঘরে বসে আমলাদের স্যালুট উপভোগ করছেন, এমন উপলব্ধি দলেরই বিধায়কদের।
এ প্রসঙ্গে মুখ খুলেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ফোন না ধরা কিংবা বিধায়কদের অসযোগিতার বিষয়টি আমার জানা নেই। গেরুয়া এমএলএ’দের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, দলের ১৮ জন এমপি রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে বিধায়করা কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিল্লিতে পাঠাক। তবে এর জন্য বিধায়কদের দিল্লি যাওয়ার পরিকল্পনাকে কার্যত বাতিল করেছেন তিনি। দিলীপ ঘোষের দাবি, রাজ্য সভাপতি ঠিক করবে বিধায়করা দিল্লি যাবেন কি না। এভাবে দুমদাম দিল্লি গিয়ে ছবি তোলার রেওয়াজ বিজেপিতে নেই। সংগঠনের সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বিধায়কদের কাজ করতে হবে। তবে শেষে তিনি বলেন, কেন্দ্রে রাষ্ট্রমন্ত্রীদের কার্যত কোনও ক্ষমতাই নেই। পূর্ণমন্ত্রীদের হাতেই সব ক্ষমতা। তাই এমপি’দের মাধ্যমেই দিল্লিতে দরবারের আবেদন জানিয়েছেন মেদিনীপুরের এমপি। এ বিষয়ে সুভাষ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর প্রতিক্রিয়া মেলেনি।