জামাই ষষ্ঠীর সাতকাহন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে মেয়ে ও জামাইকে নিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় জামাইষষ্ঠী। এই দিনটিতে শ্বশুরবাড়িতে ভূরিভোজ করেন জামাইবাবাজিরা। সকালে ফলাহার দিয়ে শুরু হয় জামাই-অপ্যায়ন। তার পর মিষ্টি থেকে নানা ব্যঞ্জন। এককালে নিজের হাতে ষোড়শ ব্যাঞ্জন রেঁধে খাওয়াতেন শাশুড়ি মেয়েরা।
কীভাবে উদ্ভব এই উৎসবের?
মা ষষ্ঠী হলেন সন্তানাদির দেবী। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে তাঁর পূজো হয়, যাতে তিনি কন্যাকে সন্তানবতী হওয়ার আশীর্বাদ দেন। মা ষষ্ঠীর সঙ্গে জামাইকেও জুড়ে দিয়ে এর নাম হয়েছে ‘জামাই ষষ্ঠী’। প্রকৃত পক্ষে জামাইষষ্ঠীর আসল উদ্দেশ্য হল সন্তানধারণ এবং বংশবৃদ্ধি। মেয়ে যাতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্যজীবন যাপন করতে পারে, তার জন্য মঙ্গলকামনা।
এই পুজোর উপকরণগুলি হল – আম্র পল্লব, তালপাতার পাখা, ধান, দূর্বা, পাঁচ থেকে নয় রকমের ফল, ফুল এবং বেল পাতা, সাদা সুতো ও হলুদ।
ষষ্ঠীপুজো উপলক্ষ্যে শাশুড়িমায়েরা ভোরবেলা স্নান করে ঘটে জল ভরে ঘটের ওপর আম্র পল্লব স্থাপন করেন। সঙ্গে রাখেন তালপাতার পাখা। ১০৮টি দূর্বা বাঁধা আঁটি দিয়ে পুজোর উপকরণ সাজানো হয়। করমচা ফল-সহ পাঁচ থেকে সাত বা নয় রকমের ফল কেটে কাঁঠাল পাতার ওপর সাজিয়ে দিতে হয় । একটি সুতো হলুদে রাঙিয়ে তাতে ফুল, বেলপাতা দিয়ে গিঁঠ বাঁধতে হয়। এর পর মা ষষ্ঠীর পুজো শুরু হয়।
শাশুড়িমা জামাইয়ের হাতে হুলুদে রাঙা সুতোটা বেঁধে দেন, পাখার হাওয়া দিয়ে ‘ষাট-ষাট-ষাট’ বলে ধান-দূর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করেন। পাখা দিয়ে হাওয়া করার অর্থ, তোমার সমস্ত আপদ-বিপদ দূরে যাক। তিন বার ‘ষাট-ষাট-ষাট’ বলার অর্থ দীর্ঘায়ু কামনা করা। ফুল, বেলপাতা দিয়ে সুতো বেঁধে দেওয়ার অর্থ, তোমার সঙ্গে আমাদের পরিবারের বন্ধন এবং আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার বন্ধন থাকুক অটুট।
কিন্তু এবছর জামাইদের কপালে আর সে সুখভোগ হল না। করোনা আতঙ্কের থাবা শেষ অবধি পড়ল জামাইষষ্ঠীতেও। বাড়ি বসেই জামাইদের এবার কাটাতে হবে জামাইষষ্ঠী। শাশুড়িমার আদর থেকে বঞ্চিতই রইল সব জামাই।