করোনাকে ঢাল করে বেঙ্গল কেমিক্যাল, দুর্গাপুর অ্যালয়ের বেসরকারিকরণে উদ্যোগী মোদী সরকার
মোদী সরকারের বেসরকারিকরণের হাত চেপে বসছে বাংলার গলাতেও। সোমবার লোকসভায় অর্থমন্ত্রক জানিয়ে দিল, বেঙ্গল কেমিক্যাল, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ এবং দুর্গাপুর অ্যালয় স্টিল বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সোজা কথায়, বাংলার এই তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার দখল অচিরেই নেবে কোনও প্রাইভেট কোম্পানি।
তালিকা মোট ৩৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার, যা পাঁচ বছর আগেই তৈরি করে ফেলেছিল মোদী সরকার। সেই সংক্রান্ত প্রশ্নই সরকারের কাছে রেখেছিলের তৃণমূলের এমপি মালা রায়। এদিন লোকসভায় অর্থমন্ত্রকের পক্ষ থেকে তারই লিখিত উত্তরে জানানো হল তালিকায় রাখা নামগুলি। কেন্দ্র জানিয়েছে, শুধু বাংলার তিনটি নয়, সিংহভাগ সংস্থার বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়াই শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ইতিমধ্যেই ১৮টি সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে কয়েকটি ক্ষেত্রে। হিন্দুস্তান অ্যান্টিবায়োটিকস, আইটিডিসি এবং বেঙ্গল কেমিক্যালের বিলগ্নিকরণ করবে সরাসরি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। তবে সাতটি সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে আইনি ও অন্য জটিলতায়। আর আটটি সরকারি সংস্থাকে বিক্রি করে দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়েছে। এই আটটি সংস্থা হল, হিন্দুস্তান পেট্রলিয়াম, রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন লিমিটেড, এইচএসসিসি (হসপিটাল সার্ভিসেস কনসালটেন্সি কর্পোরেশন), ন্যাশনাল প্রোজেক্টস কনস্ট্রাকশন, ড্রেজিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া, টিএইচডিসি (তেহরি হাইড্রো ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন), নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার, কামরাজার পোর্ট লিমিটেড। সোমবার লোকসভায় সরকারের দেওয়া তালিকায় আইডিবিআই ব্যাঙ্ক ছাড়া অন্য কোনও ব্যাঙ্কের নাম নেই। যদিও এই তালিকা তৈরির পরবর্তী সময়ে স্থির হয়েছে, সরকার আরও দু’টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বিলগ্নিকরণ করবে। নীতি আয়োগও তেমন সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। পাশাপাশি দু’টি বিমা সংস্থারও বিলগ্নিকরণ হবে। এলআইসির শেয়ার বাজারে আনা হবে। আর অন্য একটি বিমা সংস্থাকে সরাসরি বিক্রি করা হবে বলে ঠিক করেছে মোদী সরকার। আগামী আর্থিক বছরে আরও একঝাঁক সংস্থার নাম বেসরকারিকরণের তালিকায় আসবে বলে সরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে।
মোদী সরকারের উদ্দেশ্যও অবশ্য তাই। আর এই লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আটঘাঁট বাঁধতে শুরু করেছে কেন্দ্রে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মধ্যগগনে থাকাকালীন বণিকসভার সভাতেও সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা দাবি করেছিলেন, আর্থিক বৃদ্ধি চাইলে বেসরকারিকরণ করতেই হবে। তাঁর যুক্তি ছিল, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ করলে উৎপাদন বাড়বে। আর উৎপাদন সেক্টর গতি না পেলে আর্থিক বৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী করা সম্ভব নয়। এমনকী, একঝাঁক সংস্থার বেসরকারিকরণ হওয়ার পর করোনার তৃতীয় ঢেউও যদি আঘাত হানে, দেশের অর্থনীতি ধাক্কা খাবে না। অর্থাৎ, করোনাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই সরকারি সংস্থাগুলির দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছিল মোদী সরকার। সেই প্রবণতাই এখন গতি পাচ্ছে।