পাহাড়ে তুষারপাত! পর্যটকরা উচ্ছ্বসিত
বড়দিনের আগে বুধবার কালিম্পং পাহাড়ে শিলাবৃষ্টি হল। পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে এদিন দুপুরে পাহাড়ের দু’টি এলাকায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে শিলাবৃষ্টি হয়। বৃষ্টি না হলেও জাঁকিয়ে শীত পড়েছে শৈলশহর দার্জিলিংয়ে। এই অবস্থায় বর্ষশেষেই পাহাড়ে তুষারপাতের সম্ভাবনা বাড়ছে। আবহাওয়ার গতিবিধি পর্যালোচনা করে এদিন এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া অফিস। এ নিয়ে পর্যটকরা রীতিমতো উচ্ছ্বসিত। বরফ পড়ার সম্ভাবনা তৈরির খবরে পাহাড়ে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে বলে আশা প্রশাসন ও ট্যুর অপারেটরদের। এদিকে, বড়দিন ও নতুন বছর উপলক্ষে পাহাড়জুড়ে সাজ সাজ রব।
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে পাহাড়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস আগেই জানিয়েছিল আবহাওয়া দপ্তর। সেই মতো এদিন দুপুরে কালিম্পং জেলার রিশপ ও আলগাড়ায় আচমকা মেঘ জমে। কিছুক্ষণের মধ্যে দু’জায়গাতেই শিলাবৃষ্টি হয়। শিলার দাপট বেশি ছিল রিশপে। সেখানকার কয়েকটি এলাকা নিমেষের মধ্যে ঢেকে যায় শিলায়। পর্যটকরা তা দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কেউ হোটেলে কিংবা কেউ হোম স্টের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে শিলাবৃষ্টির দৃশ্য মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বন্দি করেন। কেউ কেউ আবার বৃষ্টি থামার পর শিলার আস্তরণের উপর দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন।
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে কালিম্পংয়ে এদিন শিলাবৃষ্টি হয়। এদিন কালিম্পংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক আর বিমলা বলেন, দু’টি জায়গায় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বড়দিনের মুখে এই আবহাওয়া পাহাড়ে অন্যমাত্রা যোগ করল। তবে দার্জিলিংয়ের পাহাড়িভাগে বৃষ্টি না হলেও হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা। সর্বক্ষণ গরম পোশাক গায়ে চাপিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে মানুষজনকে। এদিন দুপুরে রাস্তার ধারে আগুন জ্বালিয়ে অনেককেই হাত, পা সেঁকতে দেখা যায়। দার্জিলিং পাহাড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছি। রুম হিটার চালিয়ে কিংবা কাঠ জ্বালিয়ে হোটেল, হোম স্টে ও শোওয়ার ঘর গরম রাখা হচ্ছে।
পাহাড়বাসীর উৎসবগুলির মধ্যে বড়দিন অন্যতম। এ জন্য শৈলশহর কালিম্পং ও দার্জিলিং সাজিয়ে তুলেছে প্রশাসন। ক্রিসমাস ট্রি, স্টার ও আলোরমালায় সাজানো হয়েছে দুই শহরকে। কালিম্পংয়ের জেলাশাসক বলেন, এখানে বেশকিছু প্রাচীন গির্জা রয়েছে। সেগুলির পাশাপাশি প্রধান রাস্তাগুলি আলোয় সাজিয়ে তুলেছে পর্যটন দপ্তর। বড়দিনে পর্যটকদের ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছি। ট্যুর অপারেটররা বলেন, এখন পাহাড়ে স্থানীয় ও ভিনরাজ্যের পর্যটকদের ভিড় রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশি। নতুন বছরের মুখে এই ভিড় আরও বাড়বে।এই অবস্থায় পর্যটকদের জন্য সুখবর শুনিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। তাদের বক্তব্য, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে আগামী শুক্র ও শনিবার পাহাড়ের উপরিভাগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আবার ২৯ ডিসেম্বর আরএকটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ে মেঘ তৈরি হবে। বৃষ্টি ও তুষারপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এর জেরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কমবে দিনের তাপমাত্রা। এর ফলে দিনের বেলাতেও শীত অনুভূত হবে।
সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ভূমধ্যসাগর ও সংলগ্ন অঞ্চলের উপর থেকে উৎপন্ন পশ্চিমী ঝঞ্ঝা পূর্ব দিকে আসছে। এর জেরে পাহাড়ে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ের মতো উত্তরবঙ্গের সমতলভাগেও ঠান্ডা বাড়ছে। বিশেষ করে রাতে ও সকালের দিকে হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়ছে। এদিন শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ১৩.৩, ১০.২ এবং ৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।