কুলতলিতে বাঘের দেখা, জাল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে সম্পূর্ণ গ্রাম

গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে সাক্ষাৎ আতঙ্ক, সুন্দরবনের বাঘ

December 24, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

তখন কাকভোর। কাঁকড়া ধরতে মাতলা নদীতে গিয়েছিলেন দুই মহিলা। আচমকা হলুদ রঙের বিদ্যুৎ খেলে যায় দূরের ঝোপে। ভাল করে ঠাউর করে বুঝতে পারেন, গাছের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে সাক্ষাৎ আতঙ্ক, সুন্দরবনের বাঘ। 


এরপর প্রবল চিৎকার চেঁচামেচি।  গায়েনের চক এলাকার কয়েকজন কাছেই কাঁকড়া ধরছিলেন। তারা হাতের সবকিছু নদীর ধারে ফেলে চিৎকার লক্ষ্য করে ছোটেন। অত মানুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে বাঘ তখন হাওয়া। মাতলার তীরে আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপছেন দুই মহিলা। শুরু হয় গুঞ্জন, বাঘ কি তাহলে দু’জনকে ফলো করে এখানে এসেছে? তারপর অনেককে দেখে চম্পট দিয়েছে? নাকি অন্য কিছু দেখে রজ্জুতে সর্পভ্রম হয়েছে মৎস্যজীবী উর্মিলা হালদার, মীনা নস্কর গায়েন নামে দুই মহিলার?

ই মহিলা যে ভুল দেখেন নি, তার প্রমান মিলল খানিক বাদেই। নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পান সবাই। আর তারপর দুই মহিলার ঠকঠকানি ছড়িয়ে পরে গোটা এলাকায়। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে লাঠি, নৌকার বৈঠা নিয়ে টহলে বেরোন। কুলতলি থানার পুলিস টহল দিতে শুরু করে। খবর যায় বনদপ্তরে। পিয়ালি বিটের রেঞ্জার বনদপ্তরের কর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসেন। বাঘের পায়ের ছাপ পরীক্ষা করেন। বিকালের পর ঘটনাস্থলে যান দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় সহ আধিকারিক অনুরাগ চৌধুরী। কুলতলি চিতুরি বিট অফিস থেকে জাল  পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয় অঞ্চলটিকে পুরো ঘিরে ফেলার জন্য। আগুন জ্বালিয়ে রাত পাহারার ব্যবস্থা করেন গ্রামবাসীরা। লোকালয়ে পুলিস পিকেট বসানো হয়। পাশাপাশি, ৬-৭টি জেনারেটর বসিয়ে আলো দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে গোটা এলাকা। পাড়ায় পাড়ায় মাইকিং করে মানুষকে আশ্বস্ত করছেন বনদপ্তরের কর্মীরা।  দক্ষিণ ২৪ পরগনা বন বিভাগীয় আধিকারিক মিলন মণ্ডল বলেন, পরিস্থিতির দিকে একটানা নজর রাখা হচ্ছে।    

স্থানীয় মানুষদের মনে পড়ে যাচ্ছে চলতি মাসেই মৈপীঠ উপকূল থানার গুড়গুড়িয়া-ভুবনেশ্বরী পঞ্চায়েতের চারশো বিঘা ও নস্করের ঘেরি এলাকায় ধানক্ষেতে হানা দিয়েছিল বাঘ। তারপর এবার বাঘের পায়ের ছাপ কুলতলিতে। মাতলা নদী সংলগ্ন গায়েনের চক, ধরাবাগদা, গরানকাঠি, রামপুর লোকালয় রয়েছে।  গায়েনের চক এলাকার মৎস্যজীবী বঙ্কিম নস্কর বলেন, এদিন আমরা সকালে নদীর চরে কাঁকড়া শিকার করছিলাম। আচমকা দেখি উর্মিলা আর মীনা বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছেন। আমরা গিয়ে উদ্ধার করি। তারপর দেখি নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপ। ঘনঘন বাঘ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছে ফলে নদীর পাড়ের বাসিন্দারা বুকে প্রবল ভয় নিয়ে বাস করতে করছেন।  স্থানীয় মৎস্যজীবী শ্রীদাম হালদার বলেন, এখন থেকে কি রোজ রাতে আগুন জ্বালিয়ে পাহারা দিয়ে আমাদের থাকতে হবে? দিনের বেলা কাজকর্ম ছেড়ে কি বসে থাকতে হবে বাড়িতে? বনদপ্তর বলছে, লোকালয়ে বাঘের পা রাখার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। তবে আপাতত নজরদারি বাড়িয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সকালের দিকে গোটা এলাকা জাল দিয়ে ঘিরে ফেলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। বনদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত করে ওঠা যায়নি। রাতে পটকা বাজি ফাটিয়ে বাঘকে দূরে রাখার চেষ্টা চলছে। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen