সুন্দরবনের ধূলিভাসানির জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হল কুলতলির বাঘ
অবশেষে নিজের ডেরায় ফিরল কুলতলিতে (Kultali) ত্রাস ছড়ানো রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি। বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ তাকে সুন্দরবনের ধূলিভাসানির জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে বনদপ্তর সূত্রে খবর। আপাতত সুস্থ থাকায় পূর্ণবয়স্ক পুরুষ বাঘটিকে ডেরায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বনকর্মীরা। বুধবার সকাল ৭টা নাগাদ জাল খুলে দিতেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দক্ষিণরায়। তারপর নদী সাঁতরে ফিরে যায় তার পুরনো আস্তানায়। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন স্থানীয় মানুষ থেকে বনকর্মী – সকলেই। তবে বাঘটির উপর নজরদারি চলবে বলে জানা গিয়েছে বনদপ্তর সূত্রে।
গত টানা ৬ দিন ধরে সুন্দরবনের কুলতলি এলাকায় ত্রাস ছড়ানোর পর মঙ্গলবার সকালে বনদপ্তরের ছোঁড়া ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করা হয় বাঘটিকে। খাঁচায় ঢোকানোর পরও দরজা খোলা থাকায় খাঁচা থেকে ফের বেরিয়ে যায় সে। বেশ কিছুক্ষণ তার গতিবিধির দিকে নজর রেখে আবার ঘুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে তবে বাঘকে খাঁচাবন্দি করা হয়। এরপর তাকে ঝড়খালি চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন বনি ক্যাম্পে রেখে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের (Royal Bengal Tiger) শারীরিক পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। বাঘের নখ-দাঁত সবই পরীক্ষার করার পর স্বাভাবিক থাকায় তাকে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বনদপ্তর।
তবে তাকে ধরে ঘরে ফেরানোর পদ্ধতি এত সহজ ছিল না মোটেই। আচমকা লোকালয়ের দিকে এসে গত কয়েকদিনে যেভাবে কুলতলি এলাকায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে দক্ষিণরায়, তাতে বেশ চিন্তিত ছিলেন বনকর্মীরাও। স্থানীয় মানুষজন যাতে সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও বাঘের গর্জনে বারবার কেঁপে উঠেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রয়্যাল বেঙ্গলের আতঙ্কেই জখম হয়েছেন এলাকাবাসী।
‘বাঘবন্দি খেলা’য় সফল হতে অবশ্য বনকর্মীদের বেশ বেগ পেতে হয়। সোমবার বিকেল থেকে ড্রোনের মাধ্যমে চলছিল নজরদারি। কিন্তু সাফল্য আসেনি। মঙ্গলবার সকালে বনকর্মীরা ফের হাজির হন এলাকায়। ছিলেন দমকল কর্মীরাও। তাঁরা হোসপাইপ দিয়ে জঙ্গলে জল দিতে শুরু করেন। এমনভাবে জল দেওয়া হচ্ছিল যাতে বাঘটি বনদপ্তরের খাঁচার দিকে চলে আসে। সেই সময় বনকর্মীদের আরেকটি দল হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে জঙ্গলে ঢোকে। সেই লাঠি দিয়ে গাছপালায় ক্রমাগত আঘাত করায় বাঘটি ভয় পেয়ে যায়। গর্জন শুরু করে। তারপর ধীরে ধীরে তার অবস্থান চিহ্নিত করে ঘুুমপাড়ানি গুলি ছুঁড়ে ২ বারের চেষ্টা ধরা হয়। অবশেষে বুধবার নিজের ডেরায়, ধূলিভাসানির জঙ্গলে ফিরল দক্ষিণরায়।