‘পুলিশ আমাদেরই লোক’ উত্তরাখণ্ডের বিতর্কিত ধর্ম সংসদে অভিযুক্তের নতুন ভিডিও ভাইরাল
হরিদ্বারের ধর্ম সংসদে বিদ্বেষমূলক ভাষণের ঘটনায় শুরু থেকেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিসের ভূমিকা। এফআইআর দায়েরে গড়িমসি থেকে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রতি আনুগত্য কিংবা অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘সখ্যতা’— এমনই নানা অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছে উত্তরাখণ্ড পুলিস। এবার সেই তালিকায় নবতম সংযোজন ভাইরাল হওয়া নতুন একটি ভিডিও। সেখানে এক পুলিসকর্মীকে অভিযুক্ত গেরুয়া বসনধারীদের সঙ্গে রীতিমতো হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, অভিযুক্তদের একজন ওই পুলিসকর্মীর উদ্দেশে স্পষ্ট বলে, ‘এই ছেলেটা তো আমাদের দলেই আছে।’
গত ১৭ থেকে ২০ ডিসেম্বর হরিদ্বারের জ্বালাপুরের বেদ নিকেতনে ধর্ম সংসদের নামে প্রকাশ্যে বিদ্বেষমূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আয়োজকদের বিরুদ্ধে। চাপে পড়ে পুলিস পরে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এফআইআরও দায়ের করে। গত মঙ্গলবার তাঁদেরই তিনজন প্রবোধানন্দ গিরি (ধর্ম সংসদের মুখ্য আয়োজক), ধর্মগুরু যতি নরসিংহানন্দ, পূজা শাকুন পান্ডে ওরফে সাধ্বী অন্নপূর্ণা এবং আরও দুই ধর্মীয় নেতা শঙ্করাচার্য পরিষদের প্রধান আনন্দ স্বরূপ এবং উত্তরপ্রদেশ শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট ওয়াসিম রিজভি ওরফে জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী হরিদ্বার থানায় পৌঁছন। হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে অজ্ঞাতপরিচয় এক মৌলবির বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করার আর্জি জানান তাঁরা। যদিও পুলিস শেষপর্যন্ত সেই আর্জিতে সায় দেয়নি। কিন্তু, তার আগে দু’পক্ষের আলাপচারিতার সময়ে মোবাইলে তোলা একটি ভিডিও নেটমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছে প্রশাসভিডিওতে দেখা গিয়েছে, হরিদ্বার কোতোয়ালি থানার এসএইচও রাকেশ কাথাইতের সঙ্গে থানার মধ্যে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন পাঁচ ধর্মগুরু। সাধ্বী অন্নপূর্ণা ওই পুলিসকর্মীকে বলছেন, ‘তুমি যে পক্ষপাতদুষ্ট নও, সেই বার্তা দিতে হবে। তুমি একজন সরকারি কর্মী। সবাইকে সমান চোখে দেখবে। আমরা তোমার কাছে এটাই চাই। আশা করি সবক্ষেত্রেই তুমি জয়ী হবে।’ সাধ্বীর এই বক্তব্যে বিগলিত দেখায় ওই পুলিসকর্মীকে। তখনই পাশ থেকে যতি নরসিংহানন্দকে বলতে শোনা যায়, ‘ছেলেটা আমাদের দলেই থাকবে।’ কথা শেষ হতে না হতেই উপস্থিত সকলে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। একগাল হাসি ছড়িয়ে পড়ে পুলিসকর্মীর মুখেও। বিতর্কের চাপে বুধবার নড়েচড়ে বসে উত্তরাখণ্ড পুলিস। এদিনই এফআইআরে নাম থাকা দু’জনকে হাজির হওয়ার নোটিস পাঠানো হয়েছে। এসএইচও রাকেশ কাথাইত এদিন জানিয়েছেন, আপাতত রিজভি এবং সাধ্বী অন্নপূর্ণাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই তৃতীয় অভিযুক্তের কাছেও নোটিস যাবে। ভাইরাল ভিডিও প্রসঙ্গে একটি শব্দও খরচ করেননি এসএইচও। শুধু বলেছেন, ‘নিছক অভিযোগের ভিত্তিতে কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। তদন্তের পরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, পুনেতে একই ধরনের ঘটনায় এফআইআর দায়ের হল এক ধর্মগুরু সহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার দায়ে গত মঙ্গলবার হিন্দু ধর্মগুরু কালীচরণ মহারাজ, ডানপন্থী নেতা মিলিন্দ একবোটে সহ আরও চারজনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মহাত্মা গান্ধীর নামে কুরুচিকর মন্তব্যের জন্য কালীচরণের বিরুদ্ধে ছত্তিশগড় ও মহারাষ্ট্রেও এফআইআর হয়েছে।