আম্পান বিধ্বস্ত বাংলার জন্য ত্রাণ জোগাড় করছেন মিস ইংল্যান্ডের
‘মিস ইংল্যান্ড’-এর মুকুট নামিয়ে রেখে মাস দুয়েক আগেই হাতে স্টেথোস্কোপ তুলে নিয়েছেন। লক্ষ্য একটাই, এই কঠিন সময়ে নিজেকে করোনা চিকিৎসার কাজে নিয়োজিত করা। একাধারে খ্যাতনামা মডেল, আবার তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ২ দুটো মেডিক্যাল ডিগ্রিও। প্রথম ডিগ্রিটি মেডিক্যাল সায়েন্সে, দ্বিতীয়টি মেডিসিন এবং সার্জারিতে। ব্রিটিশ অহম চুরমার করে গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালেই ‘মিস ইংল্যান্ড’-এর খেতাব জিতেছিলেন ভাষা মুখোপাধ্যায় (Bhasha Mukherjee)। সেই বঙ্গকন্যাই এবার দূরদেশে বসে আম্পান বিধ্বস্ত বাংলার জন্য এগিয়ে এলেন।
ইংল্যান্ডের বাসিন্দা হলেও বর্তমান বাংলার পরিস্থিতি তাঁকেও ভাবিয়ে তুলেছে। একে করোনা আবহ, উপরন্তু গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো সুপার সাইক্লোন আম্পান। ঝড় চলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাণ্ডবের প্রভাবে ভুগছে বাংলা। কেউ ঝড়ে মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে এক টুকরো ত্রিপল-প্লাস্টিকের আশায় সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ বা খিদের জ্বালায় দিশাহীন। শুধু যে আজকের খিদে মেটানোর তাগিদে তাঁদের মাথায় হাত পড়েছে এমনটা নয় কিন্তু! চিন্তার ভাঁজ পড়েছে অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবেও। নোনা জল ঢুকে নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। খাব কী? আবার দুর্যোগ এলে মাথা গুঁজব কোথায়? একরাশ চিন্তা নিয়ে অসহায় মুখেদের ভীড় চতুর্দিকে। সেসমস্ত প্রান্তিক মানুষগুলির জন্যই ‘মিস ইংল্যান্ড’ ভাষা মুখোপাধ্যায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন।
ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে ভাষা জানিয়েছেন, কলকাতাই মানেই তাঁর পরিবার। আমফান সাইক্লোনের জেরে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত তথা শহরতলীতে প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আশ্রয়হীন পথশিশু, প্রান্তিক মানুষগুলোর জন্য ‘দ্য হোপ ফাউন্ডেশন’ নামে এক সংস্থা কাজ করছে। সে সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসেবেই ভাষা মুখোপাধ্যায় আমফান বিধ্বস্ত এলাকার দুস্থ মানুষদের জন্য ত্রাণ তহবিল গড়ে তুলেছেন। অর্থ সাহায্যের জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন সবাইকে।
প্রসঙ্গত, মার্চের গোড়ার দিকেই কভেন্ট্রি মার্সিয়া লায়েন্স ক্লাবের আমন্ত্রণে ৪ সপ্তাহের জন্য ভারতে এসেছিলেন। বেশ কিছু স্কুলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালান ভাষা। পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়েও কাজ করেন। ইতিমধ্যেই তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীদের কাছ থেকে জানতে পারেন ব্রিটেনে করোনা পরিস্থিতি কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কীভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থা চলছে ওদেশে। এরপরই বোস্টনের পিলগ্রিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভাষা মুখোপাধ্যায়। যেখানে তিনি আগে জুনিয়র চিকিৎসক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তিনি জার্মানি হয়ে ব্রিটেনে ফেরেন। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিন সেলফ আইসোলেশনে থাকার পর পিলগ্রিম হাসপাতালে চিকিৎসার কাজে যোগ দেন বঙ্গকন্যা ভাষা মুখোপাধ্যায়।
কলকাতায় জন্ম হলেও ৯ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ইংল্যান্ডে চলে যান ভাষা। সেখানেই বড় হয়ে ওঠা। পিলগ্রিম হাসপাতালে এখন তাঁর নিঃশ্বাস ফেলার সময়টুকুও নেই। গ্ল্যামারাস জীবন ছেড়ে বিপদের মুহূর্তে যেভাবে করোনা আক্রান্তদের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন কিংবা বাংলার পরিস্থিতি যেভাবে ভাষা মুখোপাধ্যায়কে (Bhasha Mukherjee) ভাবিয়ে তুলেছে, তা আবারও প্রমাণ করে দিল যে সমাজে কিছু মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব এখনও বেঁচে রয়েছে। প্রমাণ করে দিল, শিকড়ের টান যে মিথ্যে নয়।