বুধবার দুপুরেই আছড়ে পড়বে ‘নিসর্গ’, জারি লাল সতর্কতা
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (India Meteorological Department বা IMD) মঙ্গলবার জানিয়েছে যে আরব সাগরের ওপর ঘনীভূত গভীর নিম্নচাপ আজ দুপুর বারোটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ‘নিসর্গ’ নামের এই ঘূর্ণিঝড় আগামী ১২ ঘণ্টায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আকার নিতে পারে বলে জানানো হয়েছে, যার হাওয়ার গতি হতে পারে ৯০-১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা, এবং সর্বোচ্চ গতি ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
এখন পর্যন্ত এই ঘূর্ণিঝড়ের যা গতিপথ দেখা গিয়েছে, তাতে মহারাষ্ট্রের রায়গড়ে হরিহরেশ্বর এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল দামানের মাঝামাঝি ৩ জুনের দুপুর নাগাদ ল্যান্ডফল হবে নিসর্গের। এর ফলে মুম্বই, থাণে, এবং পালঘরে ৪ জুন পর্যন্ত জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের উপকূলবর্তী জেলায় মোতায়েন হয়েছে ন্যাশনাল ডিজাস্টার রিলিফ ফোর্স বা এনডিআরএফ-এর ৩৩ টি দল।
পূর্বমধ্য আরব সাগরের ওপরের গভীর নিম্নচাপ গত আন্দাজ আট ঘণ্টায় ১১ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে উত্তরদিকে এগিয়েছে। আজ সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ এর অবস্থান ছিল গোয়ার পাঞ্জিম থেকে ২৮০ কিমি উত্তর-উত্তরপশ্চিমে, মুম্বই থেকে ৪৩০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, এবং গুজরাটের সুরাট থেকে ৬৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে। আগামী ১২ ঘণ্টায় প্রথমে উত্তরমুখীই থাকবে নিসর্গের গতি, কিন্তু তারপর তা উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে ঘুরে গিয়ে মহারাষ্ট্রের উত্তরভাগ এবং গুজরাটের দক্ষিণ উপকূল পেরোবে আগামীকাল, অর্থাৎ ৩ জুন দুপুরে।
গত ২১ মে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় সুপার সাইক্লোন আমফান। তার দিন দশেকের মধ্যেই আবির্ভূত হলো ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ, যার নামকরণ করেছে বাংলাদেশ (পড়ুন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এবং অন্যান্য: কে রাখে এদের নাম?)। মহারাষ্ট্র এবং গুজরাট উপকূলের বাসিন্দাদের ঝড় সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই দুই রাজ্যের অধিকাংশ মৎস্যজীবী উপকূলে ফেরত এসেছেন। নিসর্গ সম্পর্কে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও।
দিল্লির আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ আবহাওয়া কেন্দ্রের বিজ্ঞানী সুনীতা দেবী জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত এই ঝড়ের যা গতিপথ, তাতে মুম্বইয়ের দক্ষিণে ল্যান্ডফল হবে। তবে ঝড়ের গতি সততই পরিবর্তনশীল, কাজেই আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা পাল্টাতে পারে। তবে মুম্বই এই গতিপথে থাকবে, এবং সাইক্লোনের প্রভাব অনুভব করবে।”
অন্যদিকে সোমবার মোটের ওপর সময়মতোই কেরালা উপকূলে এসে পৌঁছয় মৌসুমি বায়ু, যার ফলে ভারতে শুরু হয়ে গিয়েছে চার মাসব্যাপী বর্ষাকাল, যদিও আমফানের প্রভাবে ভারতে পৌঁছতে চারদিন দেরি হয়েছে মৌসুমি বায়ুর। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এবছর “স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি” বৃষ্টি হবে উত্তর ভারতে, এবং মধ্য ও দক্ষিণ ভারতীয় উপদ্বীপে “স্বাভাবিক” বৃষ্টি হবে।
কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব ডাঃ মাধবন নায়ার রাজীবন জানিয়েছেন, “সুখবর এই যে, এবছর জুন থেকে সেপ্টেম্বর সারা দেশেই ভালো বৃষ্টি হবে। বিশেষ করে জুলাই মাসে, যা কৃষকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”