দেশ বিভাগে ফিরে যান

‘খেলা হবে’ – এক বছরে ছড়িয়ে গেছে বাংলা থেকে সারা বিশ্বে

January 7, 2022 | 3 min read

এক বছর পার করল “খেলা হবে”। বাংলার ইতিহাসে এমন জনপ্ৰিয় দ্বিতীয় একটা স্লোগান তৈরি হয়েছে, বলে মনে পড়ে না। ভোট যুদ্ধের ইতিহাসেও এমন জনপ্রিয় রাজনৈতিক গানের নজির মেলে না। ইতিহাস তৈরি করেছে “খেলা হবে”। সব রেকর্ড ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এই গান।

সালটা ২০২১, সময়টা শীতকাল। ভরা পৌষ, জানুয়ারী মাস। বাংলা তখন আসন্ন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দ্বৈরথের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। এমন সময়ই হঠাৎ এক ছড়া লিখলেন পশ্চিমবাংলার রাজনীতির সোশ্যাল মিডিয়া সেনসেশন তথা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু ভট্টাচার্য। সেই ছড়ায় সুরারোপিত হল। গান তৈরি হল। 

বলার অপেক্ষা রাখে না এই গানটি হল “খেলা হবে”। গানটি প্রকাশ্যে এসেছিল বিগত বছরের জানুয়ারী মাসের ৭ তারিখ। তারপর পেরিয়ে গিয়েছে এক বছর। এই এক বছরে খেলা হবে গানটি পৌঁছে গিয়েছে বাংলার ঘরে ঘরে, বাংলা পেরিয়ে দেশের নানান রাজ্যে, এমনকি বিদেশেও আজ খেলা হবে-র রাজত্ব। সর্বত্র খেলা হবে-র দাপট! নির্বাচনী ময়দানে, ভোটের উত্তাপে তুমুল ভাইরাল হয়েছিল খেলা হবে। 

“বাইরে থেকে বর্গী আসে 
নিয়ম করে প্রতি মাসে, 
আমি আছি তুমিও রবে,
বন্ধু এসো খেলা হবে।”

ডিজের সুরে এই লিরিকে মেতে উঠেছিল বঙ্গ, আজ যা অক্ষত। কেবল বঙ্গ নয়, আয়ারল্যান্ড থেকে আমতা, ইন্দোনেশিয়া থেকে ইছাপুর সব জায়গার বাঙালিরা খেলা হবে-র মাদকতায় ভেসেছে। দেবাংশু হয়ত সাধারণ এক স্লোগান হিসেবেই খেলা হবে বানিয়েছিলেন, যেমন করে এর আগে দিল্লি যাচ্ছে হাওয়াই চটি, মমতাদি আরেকবার বানিয়েছিলেন। কিন্তু খেলা হবে-র জন্য অন্য কিছু অপেক্ষা করছিল। হয়ত ইতিহাস হবে বলেই!

বাঙালির ছন্দবোধ মারাত্নক, অন্তমিল আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি, রসবোধেও আমরা কম যাই না, সেই ছন্দ আর হাস্যরসের মিলনে বারবার তৈরি হয়েছে নানা স্লোগান, ছড়া। দেবাংশু তার সঙ্গে মেলালেন রাজনৈতিক শ্লেষ, বিদ্রুপ যা রাজনৈতিক সচেতন বাঙালির মন ছুঁয়ে গেল। ইতিহাস তৈরি হল, গত বছরের জানুয়ারীর ৭ তারিখের পরে দুদিনের মধ্যে ৯ তারিখ থেকে খেলা হবে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। ফেসবুক টুইটার জুড়ে ওয়ালে ওয়ালে ঘুরতে থাকল খেলা হবে… খেলা হবে…।

রাজনীতির বাইরের মানুষেরাও তখন খেলা হবে-র মাদকতায় মুগ্ধ, উদ্বেলিত। পিকনিক, সরস্বতী পুজো, বিয়ে বাড়ি সর্বত্র বাজতে শুরু করল খেলা হবে। ততদিন তৃণমূল কংগ্রেস খেলা হবে-কে ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে। দলীয় মিটিং মিছিল, সভা সমিতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে খেলা হবে। দেবাংশুর কাছে সকলের আবদার মিটিং গেলে গাইতে হবে খেলা হবে। বিরোধী দলগুলো কটাক্ষ করলেও, পরে তারা খেলা হবে-র লোক প্ৰিয়তার কাছে, হার মানল। খেলা হবে শব্দবন্ধটি বিরোধীরাও ব্যবহার করতে শুরু করল। জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে প্রধানমন্ত্রী, দেশের স্বরাষ্টমন্ত্রীও বাংলায় এসে খেলা হবে বলতে শুরু করেন।

অচিরের একটি গান হয়ে ওঠে নির্বাচনী হাতিয়ার, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর রাজনৈতিক সভা থেকে ‘খেলা হবে’ বলে রাজনৈতিক হুঙ্কার দিতে শুরু করেন। শাসক দল তৃণমূলের মুখে তখন শুধুই খেলা হবে আর খেলা হবে। দলীয় কর্মী সমর্থকদের নতুন করে রসদ জুগিয়েছে এই গান। তাদের বেঁধে রেখেছে খেলা হবে। নির্বাচনের ফল তৃণমূলের পক্ষেই গিয়েছে, ফল প্রকাশের পরেও খেলা হবে-র জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও কমেনি। বরং বেড়ে গিয়েছে, বাংলা পেরিয়ে উত্তরপ্রদেশ, সুদূর দক্ষিণ ভারতেও খেলা হবে-র তরজমা শোনা গিয়েছে। একটি দিবস পেয়েছি আমরা, ১৬ই আগস্ট খেলা হবে দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে বাংলায়।

এক আপাত সাধারণ স্লোগান, দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভোট মিটে যাওয়ার পরে, বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোতেও প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে খেলা হবে বেজেছে, বাংলার হালুইকারেরা খেলা হবে সন্দেশ বানিয়েছেন, খেলা হবে ব্রান্ডের চাল তৈরি হয়েছে বাংলায়। এগুলোই প্রমান করে খেলা হবে গানটি বাংলার সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকে গিয়েছে। আজ বাঙালির সাধারণ কথোপকথনেও এসে পড়েছে খেলা হবে। ক্রমশই বাংলার মজ্জায় মজ্জায় মিশে যাচ্ছে খেলা হবে, বলাইবাহুল্য দেবাংশুর সৃষ্টি অমরত্ব লাভ করেছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Debangshu Bhattacharya, #Mamata Banerjee, #tmc, #khela hobe

আরো দেখুন