দেশ বিভাগে ফিরে যান

বিনামূল্যে থাকা-খাওয়া! আম-কাশ্মীরিদের আতিথেয়তায় আপ্লুত আটকে পড়া পর্যটকরা

January 9, 2022 | 2 min read

অতিথি দেব ভব—এই দর্শন আঁকড়ে আটকে পড়া পর্যটকদের এখন রক্ষাকর্তা কাশ্মীরিরা। হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ট্রাভেল এজেন্টরা  থাকা-খাওয়ার খরচ নিচ্ছেন না। স্থানীয় বাসিন্দারা এসে বলে যাচ্ছেন, ‘একদম চিন্তা করবেন না। আমার বাড়িতে চলুন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তখন ফিরবেন।’ আম-কাশ্মীরিদের এমন আতিথেয়তা দেখে আপ্লুত পর্যটকরা। একবাক্যে তাঁরা এটাও মানছেন—‘যে যাই বলুক, কাশ্মীরিদের হৃদয় সত্যিই খুব বড়।’ 


টানা প্রায় এক সপ্তাহ তুমুল তুষারপাতে বিধ্বস্ত প্রায় গোটা ভূস্বর্গ। শ্রীনগর বিমানবন্দরে উড়ান ওঠানামা বন্ধ। স্তব্ধ শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়ক। ফলে স্থানে স্থানে আটকে পড়েছেন পর্যটকরা। ভ্রমণের যাবতীয় রসদ খুইয়ে তাঁরা এখন অসহায়। কারও হাতে টাকা নেই। কারও আবার টাকা থাকলেও খাবার পাচ্ছেন না। পানীয় জল পাচ্ছেন না। শ্রীনগর বিমানবন্দরের বাইরে কনকনে ঠান্ডায় রাত্রিযাপন করতে হচ্ছে কাউকে কাউকে। জাতীয় সড়কের ধারেও অস্থায়ী ঘাঁটি গেড়ে থাকছেন কেউ কেউ। সে এক দুর্বিসহ অবস্থা! আর এখানেই ত্রাতা হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন কাশ্মীরিরা। যে যাঁর মতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। হোটেল মালিকরা ঠিক করেছেন খাওয়া-দাওয়ার খরচ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেবেন। বাড়ি ফিরে টাকা মেটানোর আশ্বাসও দিচ্ছেন। কেউ আবার সম্পূর্ণ ফ্রি’তে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ট্রাভেল এজেন্টরা নিজেদের বাড়িতে থাকার অফার দিচ্ছেন। খালি হাতে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ারও বন্দোবস্ত করে রাখছেন। রাস্তা-ঘাটে যান চলাচল কিছুটা ছন্দে ফিরলেই তাঁরা সে কাজ করবেন। পিছিয়ে থাকছেন না কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দারাও। পর্যটকদের অভয় দিয়ে তাঁরা বলছেন, ‘এই কয়েকদিন আমার বাড়িতেই থেকে যান।’ 
মহারাষ্ট্র থেকে পরিবার নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে এসেছিলেন মহেশ পুরী। ভদ্রলোকের ৫০ ছুঁইছুঁই বয়স। সফর শেষে টানা প্রায় ১০ দিন বন্দিদশা কাটছে কাশ্মীরে। শ্রীনগর-মুম্বই বিমানে তাঁদের টিকিট কাটা ছিল। কিন্তু শ্রীনগর বিমানবন্দরে দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় উড়ান বাতিল করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পুরী বলছিলেন, ‘আমার পকেটে সামান্য ক’টা টাকা পড়ে। কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঠিক এমন সময় আমার কাছে এক হোটেল ব্যবসায়ী এলেন। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, আমার হোটেলে চলুন। থাকা-খাওয়ার খরচ ৫০ শতাংশ কমিয়ে দিচ্ছি। আমি এখন ওঁর হোটেলেই রয়েছি। বিমান চলাচল শুরু না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকব। ওঁর এই সহানুভূতি আমি আমৃত্যু ভুলব না।’ 


পুরীর মতো বহু পর্যটকই এখন হোটেলে বন্দি। শ্রীনগরের হোটেল ব্যবসায়ী তথা কাশ্মীর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ওয়াহিদ আহমেদ মালিক বলছিলেন, ‘আমার হোটেলের প্রায় ৪০ শতাংশ রুমে আটকে পড়া পর্যটকরা রয়েছেন। অনেকের কাছেই টাকাকড়ি নেই। তাঁদের পুরোপুরি ফ্রিতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’ কথা হচ্ছিল রাহুল বিস্তের সঙ্গে। দিল্লি থেকে বেড়াতে এসেছিলেন রাহুল। বাড়ি ফেরার সময় শেষ মুহূর্তে তিনি জানতে পারেন, বিমান বাতিল। অগত্যা শ্রীনগরের একটি হোটেলে আশ্রয় নিয়েছেন রাহুল। শুধু কাশ্মীরিরাই নন, আটকে থাকা পর্যটকদের পাশে দাঁড়িয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসন। এদিন রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর আহসান উল হক চিস্তি বলেছেন, ‘পর্যটকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য আমরা বিশেষ একটি দল গঠন করেছি। সেই সঙ্গে একটি হেল্পলাইনও চালু করেছি। পর্যটকদের সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দিতে সবরকম চেষ্টা চলছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Kashmir, #tourists, #srinagar, #snowfall

আরো দেখুন