দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ বেচে দিচ্ছে মোদী সরকার! সরব আরএসএস-এর শ্রমিক সংগঠন
দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সম্পদ বেচে দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের সিদ্ধান্তে এতদিন আপত্তি তুলেছিল বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলি। কিন্তু এবার বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানাল আরএসএস-এর শ্রমিক সংগঠন বিএমএস। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আরও পঙ্গু করার পাশাপাশি প্রকৃত কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ করে দিতে চাইছে মোদী সরকার— স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে এই বিস্ফোরক অভিযোগ করেছে তারা। ৫৬ ইঞ্চি ছাতিওয়ালার সরকারকে পরোক্ষে কর্পোরেটের হাতের পুতুল বলে কাঠগড়ায় তুলেছে সংগঠনটি। শুধু কঠোর ভাষা এবং তথ্যসমৃদ্ধ সমালোচনাই নয়, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত করার আগে অবিলম্বে সবপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসার দাবি তুলেছে তারা। অন্যথায় চরম কোনও আন্দোলনের পথে নামার জন্য তাঁরা যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, হুঁশিয়ারির সুরে লেখা সাত পাতার চিঠিতে সে কথাও প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বিএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক বিনয় সিনহা।
জানা গিয়েছে, বিএমএস-এর সর্বভারতীয় নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রীকে এই চিঠি দেওয়ার আগে চলতি সপ্তাহের গোড়ায় হায়দরাবাদে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেছিল। সেই বৈঠকে তামাম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা (পিএসইউ)-র সঙ্গে যুক্ত নেতৃবৃন্দকে ডাকা হয়েছিল। তার আগে অবশ্য সঙ্ঘ পরিবারের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গেও কথা বলেন বিনয়রা। সঙ্ঘ পরিচালকের সবুজ সঙ্কেত নিয়েই এই বিস্তারিত কড়া চিঠি পাঠানোর পথে এগন তাঁরা। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, আর্থিক সংস্কারের নামে মোদী সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত আদপে দেশের কর্পোরেট লবির স্বার্থবাহী হয়ে উঠছে—এখন এমনই ধারণা করছে আরএসএস নেতৃত্ব। কৃষক আন্দোলনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল তাঁদের অভিজ্ঞতা। তাদের আপত্তিকে মোদী বিশেষ পাত্তা দিচ্ছেন না দেখে, এবার তারা সঙ্ঘের গণসংগঠনগুলিকে সরাসরি সরকার বিরোধী কর্মসূচির দিকে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তাতে ক্ষুব্ধ, খেটেখাওয়া সাধারণ গেরুয়া সমর্থকদের একাংশকে অন্তত বিপথু হওয়া থেকে নিরস্ত করা যাবে বলে ধারণা তাঁদের।
মোদী কে পাঠানো চিঠিতে বিনয় বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডের ভূমিকা পালন করে আসছে বহু বছর ধরে। বিশ্বব্যাপী মন্দার সময় এই সংস্থাগুলিই দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে। দেশের জিডিপি’র ১০-১২ শতাংশের নিয়মিত ভাগীদার এই সংস্থাগুলি। পাশাপাশি কর্মসংস্থানের প্রশ্নেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির অবদান অনস্বীকার্য।
এখনও অন্তত ১২ লক্ষ লোক সরাসরি চাকরি করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায়। পরোক্ষে রোজগারের সঙ্গে যুক্ত আরও বহু লক্ষ মানুষ। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি পরিচালন নীতির ফলে ৬৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রায় সওয়া দু’লক্ষ কর্মচারী এখন নিয়মিত বেতন পান না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি গত আর্থিক বছরে প্রায় দু’লক্ষ কোটি টাকার লাভের মুখ দেখিয়েছে সরকারকে। কয়েকটি সংস্থার লোকসানের হিসেব মাথায় রাখলেও সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি কমবেশি এক লক্ষ কোটি টাকা লাভ করেছে ওই সময়ে। লাভ এবং ডিভিডেন্ড বাবদ গত আর্থিক বছরে সরকারি কোষাগারে ৭২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে লাভজনক সংস্থাগুলি। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর খাতে খরচ বাবদ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির অবদানও যথেষ্ট।
বিএমএস শীর্ষনেতা বলেছেন, রেল, বিদ্যুৎ, ব্যাঙ্কিং, বিমা, কয়লা, ইস্পাত, প্রতিরক্ষা শিল্প সহ বিবিধ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কেন্দ্রের সরকার নীতি আয়োগ নামক আমলাসর্বস্ব ও কর্পোরেট লবির ভজনাকারী সংস্থার পরামর্শে সেই অবদান ভুলতে বসেছে আজ। তাই বিএমএস আর চুপ করে বসে থাকবে না এব্যাপারে। সরকার যদিও সবপক্ষকে ডেকে এনিয়ে আলোচনা না করে তাহলে দিল্লির বুকে বড় ধরনের বিক্ষোভ কর্মসূচির পথে যেতে তারা বাধ্য হবে বলে বিনয় সতর্ক করেছেন মোদীকে।