শিলিগুড়ি পুরভোটে বিজেপির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিক্ষুব্ধ নির্দলরা
তৃণমূল কংগ্রেস নয়। শিলিগুড়িতে পুরভোটের ময়দানে সূর্য, জোড়পাতা ও সাইকেলের মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে পদ্ম শিবির। সংশ্লিষ্ট প্রতীক চিহ্ন ওয়ালা কয়েকজন প্রার্থী প্রকাশ্যে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এনিয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন বিজেপির রাজ্য কমিটির নেতারা। শনিবার তাদের রাজ্য কমিটি এব্যাপারে মণ্ডল কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলে জানা গিয়েছে। বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা অবশ্য গোঁজ কাঁটার সমস্যা মিটে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন। সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে ভোটের ময়দান সরগরম হয়ে উঠেছে।
শিলিগুড়ি পুরসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার দিনই বিজেপির নেতা-কর্মীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পুরভোটের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্ব শেষ হওয়ার পরও গেরুয়া শিবিরের সেই ক্ষোভ মেটেনি। দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর নেতারা বহু চেষ্টা করেও নির্দল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করাতে পারেননি। ইতিমধ্যে নির্দল প্রার্থীরা সূর্য, জোড়াপাতা ও সাইকেল প্রতীক চিহ্ন নিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছেন। এর জেরে গেরুয়া শিবিরে ক্ষোভের চাপা আগুন ক্রমশ ছড়াচ্ছে বলে দলের একাংশ মনে করছেন।
বিজেপির এমন বিক্ষুব্ধ প্রার্থী শহরের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে। এখানে নির্দল হিসেবে ভোটে লড়ছেন শিক্ষক দীপঙ্কর মিত্র। পাতিকলোনি এলাকায় তাঁর বাড়ি। তাঁর প্রতীক চিহ্ন সাইকেল। তাঁর হয়ে ভোটের প্রচারে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা মানিক সিংহবর্মন। মানিকবাবু ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে এখানে বিজেপির প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি একদা দলের যুব মোর্চার জেলা সম্পাদক ছিলেন। তিনি বলেন, দলে এখন নীতি, আদর্শের কোনও স্থান নেই। কিছু বেনোজল ঢুকে দলকে পচিয়ে দিয়েছে। দলের পুরনো কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে এখানে প্রার্থী ঠিক করেছে দল। এর প্রতিবাদেই দলের শিক্ষক সেলের নেতা দীপক মিত্রকে নির্দল হিসেবে প্রার্থী করেছি। দীপকবাবু জানান, ভোটের ময়দানে স্থানীয়দের কাছ থেকে সাড়া পাচ্ছি।
শহরের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে লড়াই করছেন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা দেবাশিস বিশ্বাস। তিনি দলের ৭ নম্বর মণ্ডল কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর প্রতীক চিহ্ন জোড়া পাতা। শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বিজেপির জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর অভিযোগ, দলকে ভালো না বেসে নিজেদের স্বার্থ দেখে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছেন দলের জেলা নেতাদের একাংশ।
এমন প্রার্থী শহরের ১, ৩, ৪১, ৪৭ প্রভৃতি ওয়ার্ডেও রয়েছেন। তাঁদের কারও প্রতীক চিহ্ন কেটলি, কারও সূর্য, আবার কারও সাইকেল। এলাকায় তাঁরা বিজেপির সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। তাঁরা প্রচারে নামায় বেকায়দায় পড়েছেন বিজেপি প্রার্থীরা। এনিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, এমন পরিস্থিতি থেকেই স্পষ্ট এখানে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপিকে লড়তে হচ্ছে না। দলের ক্ষোভ সামাল দিতে গিয়েই বিজেপির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এদিন বিজেপির রাজ্য কমিটির তিন প্রতিনিধি শিলিগুড়িতে এসেছেন। দলীয় সূত্রে খবর, দলের রাজ্য সহসভাপতি রথীন বোস ও সঞ্জয় সিং এবং দলের উত্তরবঙ্গের কনভেনার শ্যামচাঁদ ঘোষ এসেছেন। তাঁরা এদিন জেলা কার্যালয়ে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। একই সঙ্গে এদিন দলের জেলা কমিটির নেতারা আটটি মণ্ডল এলাকায় গিয়ে প্রার্থী, এজেন্ট ও ওয়ার্ড ইনচার্জদের সঙ্গে মিটিং করেন। দুপুরে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে এধরনের মিটিং করেন দলের শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি আনন্দময় বর্মন। নেতা ও কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, গোষ্ঠীকোন্দল ও গোঁজ কাঁটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
দলের উত্তরবঙ্গের কনভেনর অবশ্য বলেন, এক-দু’টি জায়গায় নির্দল প্রার্থী আছেন। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সমস্যা মিটে যাবে। দলের শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি বলেন, পুরভোটের ময়দানে কোথাও সমস্যা নেই। দলে কোন্দলও নেই। ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে কেটলি চিহ্ন নেওয়া নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করা হয়েছে