সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে পার্থ-ধনখড়ের কোন্দল
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সাম্প্রতিকতম সংঘাতটা বেধেছিল সোমবার। পারস্পরিক আস্তিন গোটানোর সেই প্রক্রিয়া জটিলতর আকার নিল মঙ্গলবার।
রাজ্যের পাঠানো তালিকা থেকে কাউকে বেছে না-নিয়ে বর্ধমানেরই প্রাণিবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান গৌতম চন্দ্রকে সহ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার দেখা গেল, গৌতম নন, রাজ্যের বেছে নেওয়া প্রার্থী আশিস পানিগ্রাহী সহ-উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন। সেই শুরু। এর পর দিনের নানা সময়ে কখনও শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যপালের আচরণকে ‘মস্তানসুলভ’ বললেন, কখনও রাজ্যপাল বিবৃতি জারি করে শিক্ষামন্ত্রীকে নিশানা করলেন এবং আইন অনুযায়ী যে সিদ্ধান্তগুলি আচার্যকে জানানো উচিত, সেগুলি সরাসরি রাজভবনে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন ধনখড়। রাজ্যপালের ভূমিকার নিন্দা করেছে শিক্ষক সংগঠন আবুটা। আবার পার্থকে নিশানা করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক আশিস এদিন বর্ধমানে সহ-উপাচার্য পদে যোগ দেন। সোমবারের টানাপোড়েনের পরে সহ-উপাচার্যের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক আবহে হয়নি। উপাচার্যের চেম্বারের সামনে হাজির হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য। আশিস বলেন, ‘সরকার আমাকে নিয়োগপত্র দিয়েছে, আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’ গৌতম চন্দ্র বলেন, ‘এখনও নিয়োগপত্র হাতে পাইনি। পেলে অবশ্যই কাজে যোগ দেওয়ার জন্য যাব।’ উপাচার্য নিমাইচন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশে সহ-উপাচার্য হিসেবে এ দিন কাজে যোগ দিয়েছেন আশিস পানিগ্রাহী।’ তাঁর সংযোজন, ‘চাপে আছি নানা ভাবে। ভয়ে আছি।’
এ দিনই আবার একটি নির্দেশ জারি করে আইন মানা ঘিরে বিভিন্ন উপাচার্যের ‘সিরিয়াসনেস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধনখড়। তাঁর নির্দেশ, যে সিদ্ধান্তগুলি পাঠানো দরকার, সেগুলি সরাসরি রাজভবনেই পাঠাতে হবে। (বিশ্ববিদ্যালয় আইনের গণ্ডি টপকে ২০১৯ সালের কিছু নিয়ম বা রুল অনুসারে বেশ ক’জন উপাচার্য উচ্চশিক্ষা দপ্তর মারফত রাজভবনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে তাঁর দাবি। কোনও রুলের জোরে আইন ভাঙা যায় না বলেও জানান তিনি) সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, আচার্যের সব বিজ্ঞপ্তি অবিলম্বে কার্যকর করে রিপোর্ট দিতে হবে। না হলে উপাচার্যদের আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, ‘ওঁর গায়ের জোরে মস্তানসুলভ কথাবার্তায় আমরা ব্যথিত। উপাচার্যরাও সম্মানিত শিক্ষাবিদ।’
আইন অনুযায়ী, মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সহ-উপাচার্য চূড়ান্ত করেন আচার্য। বর্ধমানের ক্ষেত্রে যে তা হয়নি, সেটা এখন পরিষ্কার। পার্থ বলেন, ‘পানিগ্রাহীর নামে সায় দিতে বলেছিলাম বারবার। উনি দেখছি, দেখব করছিলেন। কেউ দেখেছেন যে রাজ্যপাল কারও নিয়োগপত্রে সই করেছেন?’ উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যদের নিয়োগপত্রে সাধারণত আচার্যের সচিবই সই করেন। তিনি আবার উচ্চশিক্ষা দপ্তরেরও প্রধান সচিব।
ধনখড়ের নির্দেশ প্রসঙ্গে পার্থ জানান, আইন ও বিধি মেনেই কাজ করেছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘উপাচার্য পরিষদের থেকে শুনলাম, রাজ্যপাল সবাইকে ফোনে ভয় দেখাচ্ছেন। বলছেন, সাসপেন্ড করব, খতম করে দেব। রাজ্যপাল কাউকে নিযুক্ত করে টুইট করবেন কেন? উচ্চশিক্ষা দপ্তর ছাড়া কী ভাবে উনি গৌতম চন্দ্রকে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেন!’ রাজভবন থেকে আবার একটি প্রেস বিবৃতি জারি করে বলা হয় — রাজ্যপালের অফিসকে হেয় করতেই এমন মন্তব্য করা হচ্ছে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করুন।
রাজ্যপালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নস্যাৎ করে অবশ্য সোমবার রাতে পাল্টা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল উচ্চশিক্ষা দপ্তর। ১৯৮১-র বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫৮ নম্বর ধারায় আশিসকে নিয়োগের নির্দেশ জারি করেন রাজ্য সরকারের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মণীশ জৈন। সাধারণত কোনও সংশয়ের উদ্রেক হলে এই ধারা মেনে নিজের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারে রাজ্য।