বেলাগাম করোনা সংক্রমণ, তারাপীঠেও সমস্ত হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি
বেলাগাম করোনা সংক্রমণ। তাকে জব্দ করতে রবিবার দুপুর থেকে ১৫জানুয়ারি পর্যন্ত তারাপীঠেও সমস্ত হোটেল বন্ধ রাখার নির্দেশ জারি হল। ভবিষ্যতে সংক্রমণ বাড়লে এই সময়সীমা বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। এখবর চাউর হতেই এদিন সকাল থেকে বাড়ি ফেরার আগে মাতৃদর্শনে মন্দিরে ভিড় জমান পর্যটকরা। বিকেল হতেই পর্যটক-শূন্য হয়ে পড়ে তারাপীঠ। যদিও এখনই মন্দির বন্ধের পথে হাঁটছে না কমিটি। উল্লেখ্য, একইভাবে হোটেল খালি করা হয়েছিল বোলপুরে।
গত ২৫ডিসেম্বর থেকে জমজমাট ছিল তারাপীঠ। নয়া বছরের শুরুতে ভিড় আরও বাড়ে। এরই মধ্যে সংক্রমণ বাড়ায় রাজ্যজুড়ে বিধিনিষেধ জারি হয়। সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও খোলা ছিল তারাপীঠ মন্দির। গত মঙ্গলবার মন্দির কমিটি ও হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মন্দিরে একসঙ্গে ৫০জনের বেশি ভক্তকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। মানতে হবে দূরত্ববিধিও। একইভাবে হোটেলগুলিকেও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়। কিন্তু অধিকাংশ হোটেল সেই নির্দেশ মানছিল না। অবশেষে সংক্রমণ রোধে শনিবার রাতেই জেলা প্রশাসন থেকে রবিবার দুপুর ১২টার মধ্যে হোটেল খালি করার নির্দেশ জারি হয়। আপাতত ১৫জানুয়ারি পর্যন্ত হোটেল বন্ধ থাকবে। তবে ৫০শতাংশ ক্রেতা নিয়ে খোলা যাবে বার-রেস্টুরেন্টগুলি। সেইমতো এদিন দুপুরের পর থেকেই প্রশাসনিক কড়াকড়ি শুরু হয়। পর্যটকদের হোটেল খালি করতে বলা হয়।
কলকাতা থেকে সপরিবারে আসা মণিময় মুখোপাধ্যায় বলেন, তারাপীঠ খোলা আছে জেনে শনিবার এসেছিলাম। এখান থেকে বীরচন্দ্রপুর, নিতাই বাড়ি সহ জেলার পাঁচটি সতীপীঠ ঘুরে সোমবার ফেরার কথা ছিল। সেই মতো ট্রেনে রির্জারভেশন করা ছিল। কিন্তু সকালেই হোটেল কর্মীরা জানান, দুপুর ১২টার মধ্যে ঘর ছেড়ে দিতে হবে। এই অবস্থায় কী করে বাড়ি ফিরব? ট্রেনের রির্জারভেশনও মিলবে না।
হোটেল খালি করার নির্দেশ পেতেই এদিন সকালে পুণ্যার্থীদের ঢল নামে মন্দিরে। ফলে শিকেয় ওঠে দূরত্ববিধি। সবাই চাইছেন তড়িঘড়ি মায়ের কাছে পুজো দিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরতে। ফলে ঠেলাঠেলি শুরু হয় মন্দির চত্বরে।
এদিন থেকে হোটেল বন্ধ হয়ে গেলেও খোলা থাকছে তারামায়ের গর্ভগৃহ। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা হোটেলে থাকেন। তাই, হোটেল বন্ধ হওয়ায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেল মন্দিরও। আমরা চাইব, খুব শীঘ্রই সবকিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরুক। কারণ, দীর্ঘদিন আত্মশাসন চলায় এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা সঙ্গীন। তিনি বলেন, হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত কয়েক হাজার পরিবারে আতঙ্ক শুরু হয়ে গিয়েছে।
এব্যাপারে টিআরডিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশে ফের হোটেল বন্ধ হওয়ায় বহু মানুষের কষ্ট হবে ঠিকই কিন্তু কিছু করার নেই। চলতি ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতেই হবে। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, পর্যটক আনাগোনায় সংক্রমণ যাতে মাত্রাছাড়া না হয়, সেজন্যই ১৫জানুয়ারি পর্যন্ত হোটেল বন্ধ রাখা হচ্ছে। তবে রেস্তোরাঁ ও বার ৫০শতাংশ ক্রেতা নিয়ে চালু থাকছে। হোটেল অ্যাসোসিয়েশনও সহযোগিতা করছে।