বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার টোপ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ, বিজেপি নেতার অডিও রেকর্ড ভাইরাল
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করার লোভ দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতানোর অভিযোগ উঠেছে বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার তত্কালীন সভাপতি সমিত দাসের বিরুদ্ধে। এনিয়ে নারায়ণগড়ের দাপুটে বিজেপি নেতা জন্মেজয় খুটিয়ার একটি অডিও রেকর্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ঘটনায় শোরগোল পড়েছে জেলাজুড়ে। যদিও ওই অডিওর সত্যতা যাচাই করেনি ‘বর্তমান’। তবে প্রার্থী হওয়ার লোভে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে প্রতারিত হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন জন্মেজয়বাবু। এনিয়ে দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার, রাজ্যের বিরোধী দলনেতার কাছেও অভিযোগ করেছেন তিনি। যদিও তাতে কিছুই লাভ হয়নি বলে তাঁর দাবি। এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।
জন্মেজয়বাবুর দাবি, একুশের বিধানসভা নির্বাচনে দলকে জেতাতে তিনি দিনরাত এক করে দিয়েছিলেন। মিটিং, মিছিল থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন কর্মসূচির জন্য তিনি প্রচুর টাকা দিয়েছিলেন। দলের তত্কালীন জেলাসভাপতি সমিত দাস তাঁকে প্রার্থী করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। জন্মেজয়বাবু বলেন, সমিতবাবু আমাকেই প্রার্থী করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। তাই আমি দলের জন্য খরচ করব না তো কে করবে? প্রার্থী হব ভেবে আমি দলের জন্য দেদার খরচ করে গিয়েছি। কখনও সমিত দাস, কখনও বা তাঁর প্রতিনিধি এসে আমার থেকে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা নিয়ে গিয়েছেন। জন্মেজয়বাবুর আক্ষেপ, বংশের সুনাম রয়েছে। আমাকে প্রার্থী করলে তৃণমূলের হারানোর ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু, সমিতবাবু আমার ও দলের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মেদিনীপুর কলেজ মাঠে জনসভা করতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই মঞ্চেই অমিত শাহের হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন কাঁথির এক প্রভাবশালী নেতা। অনুষ্ঠান পরিচালনায় খরচ হয়েছিল প্রচুর টাকা। জন্মেজয়বাবুর অভিযোগ, সেই সময় তাঁর থেকে ৫০ হাজার টাকা নেন সমিতবাবু। তিনি বলেন, আপনিই যখন প্রার্থী হচ্ছেন, তখন এরকম টাকা তো দিতেই হবে। তবে টাকা দিলেও অমিত শাহের সভায় বসার জন্য একটা চেয়ার পর্যন্ত তাঁকে দেওয়া হয়নি বলে জন্মেজয়বাবুর অভিযোগ।
জন্মেজয়বাবু বলেন, গত ৩ জানুয়ারি আমার বাড়িতে এসেছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ, নয়া জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র ও অন্যান্য নেতারা। তাঁরা মধ্যাহ্নভোজও সারেন। এসব নিয়ে আলোচনা হলেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পর্যন্ত দেননি। মেসেজ দেখেও রিপ্লাই দেননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
এখানেই শেষ নয়, ভোটের আগে জেলায় ছোটবড় বিজেপি নেতারা যখনই সভা করতে এসেছেন, তখনই তাঁদের থাকা খাওয়ার খরচ, গাড়ির তেল, সবকিছুই তাঁকে বহন করতে হয়েছে বলে অভিযোগ জন্মেজয়বাবুর। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই মেদিনীপুরজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে। চরম অস্বস্তিতে পড়েছে বঙ্গ বিজেপি। যদিও প্রাক্তন জেলা সভাপতি সমিত দাস বলেন, এধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে চক্রান্ত করা হচ্ছে।
অস্বস্তি এড়াতে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিজেপির জেলা নেতৃত্ব। বিষয়টি জানা নেই বলে সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছেন জেলা বিজেপি সভাপতি। তবে এরকম হাতেগরম ইস্যুকে সামনে পেয়ে বিজেপিকে তুলোধনা করে ছাড়েনি শাসকদল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, বিজেপি যে টাকা নিয়ে প্রার্থীর টিকিট বিক্রি করে, তা প্রথম প্রকাশ্যে এনেছিলেন তথাগত রায় ও রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। এবার আর কোনও সন্দেহ রইল না।