শ্রমিকদের ১০ হাজার টাকা দিন, কেন্দ্রকে মমতা
পরিযায়ী এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য এ বার বড়সড় দাবি পেশ করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউন এবং কর্মহীনতার জেরে যে প্রবল আর্থিক সঙ্কটে শ্রমিকরা, তার নিরসনে কেন্দ্রকে এগিয়ে আসতে বললেন তিনি। পরিযায়ী এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের অবিলম্বে মাথা পিছু ১০ হাজার টাকা করে ‘এককালীন সহায়তা’ দেওয়ার দাবি তুললেন। বুধবার টুইট করে মমতা এই দাবি তুলেছেন। শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য নয়, গোটা দেশের শ্রমিকদের জন্যই এই দাবি তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে আম্পান (প্রকৃত উচ্চারণ উমপুন) আছড়ে পড়ার পর ক্ষয়ক্ষতি দেখতে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আহ্বান জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে এসে ক্ষয়ক্ষতি দেখে এক হাজার কোটি টাকা সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় দল এসে ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করবে। মোদীর সফরের পর দিনই রাজ্যকে টাকা দেওয়ার নোটিস দেয় কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে এখনও আসেনি। ফলে আমপানের জেরে রাজ্যের ক্ষয়ক্ষতি কেন্দ্র কী চোখে দেখছে তার মূল্যায়নও হয়নি। এমন অবস্থায় কেন্দ্র আরও কিছু আর্থিক সাহায্য করবে কি না তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আমপানের জন্য কেন্দ্রের কাছে নির্দিষ্ট কোনও আর্থিক প্যাকেজের দাবি তোলেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দেন, দেওয়ার হলে কেন্দ্র যেন তাড়াতাড়ি দেয়। এ দিন পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য আর্থিক দাবি পেশ করলেও, সেই আগের অবস্থানে অনড় রইলেন মুখ্যমন্ত্রী। নিজের রাজ্যের জন্য নির্দিষ্ট করে তিনি দাবি পেশ করেননি। বরং তাঁর এ দিনের টুইট বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি আগের অবস্থানেই অনড়। কিন্তু লকডাউন এবং কর্মহীনতার জেরে পরিযায়ী এবং অসংগঠিত শ্রমিকরা যে রকম সমস্যার মধ্যে রয়েছেন সে বিষয়ে কোনও রাজনৈতিক দলই এত দিন নির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে সামনে আসছিল না। পরিযায়ীদের সাহায্যের দাবি অনেকেই তুলছিলেন বটে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট ভাবে এককালীন কতটা সাহায্য দেওয়া উচিত সেই প্রস্তাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফেই প্রথম এল।
পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সমস্যার কথা তুলে ধরেই এ দিন টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লিখেছেন, ‘‘অতিমারির জেরে চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য যেন মাথা পিছু এককালীন ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। পিএম কেয়ারসের একটি অংশও এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।’’
লকডাউনের ধাক্কায় বেসামাল অর্থনীতি। আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে ঊর্ধ্বমুখী বেকারত্বের হারও। এমন বেনজির পরিস্থতিকে সামনে রেখেই এ দিন নতুন দাবি তুলে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাভাইরাস রুখতে লকডাউনের পথে হেঁটেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছিল টানা লকডাউন। আর তার জেরে বিপর্যস্ত দেশের আর্থিক হাল। ১ জুন থেকে আনলক ১ শুরু হয়েছে বটে। কিন্তু অর্থনীতির চাকা এখনও তেমন ভাবে গড়াতে শুরু করেনি। আর এই কঠিন সময়ের ধাক্কা সবচেয়ে বেশি সহ্য করতে হচ্ছে পরিযায়ী ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের। এ দিন তাদের সমস্যার কথাই ফের তুলেছেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
এর আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের সরাসরি টাকা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলে নোবেলজয়া অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দাবি তুলেছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনও। এ বার সেই দাবিই উঠে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়।