করোনাকালেও টালা ব্রিজের কাজ চলছে জোরকদমে, জুলাইয়ে খুলে যাবে সেতু
কোভিড প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দিনরাত এক করে চলছে চার লেনের নতুন টালা ব্রিজ নির্মাণের কাজ। রেলের ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই, পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে ‘কেবল স্টেইড’ রেল ওভারব্রিজ পদ্ধতিতে সেতুর ঝুলন্ত অংশের নির্মাণ। লক্ষ্য, জুলাইয়ের মাঝামাঝি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ এই ব্রিজটি।
নতুন টালা ব্রিজে রেললাইনের উপরে ২৪০ মিটার অংশের পুরোটাই ঝুলবে কেবল দিয়ে। এই অংশের নির্মাণের জন্য ১০ ডিসেম্বর থেকে ‘গার্ডার’ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ পিলারের উপরের (মেইন পায়ার্সের সিপি১ থেকে পি৬ এবং পি৭ থেকে সিপি২ পর্যন্ত) কাজ চলছে পূর্তদপ্তরের কর্তা ও ইঞ্জিনিয়ারদের তত্ত্বাবধানে। নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে রেল চলাচলও।
উল্লেখ্য, পুরনো টালা ব্রিজে রেললাইনের মাঝে পিলার ছিল। কিন্তু এবার তা আর থাকছে না। পূর্তদপ্তরের কর্তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ব্রিজের নির্মাণকাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়ে গিয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির কাজও শেষ। বাকি শুধু রেললাইনের উপরের অংশের কাজ। তাঁদের আশা, সেই কাজ দ্রুত শেষ করে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে টালা ব্রিজ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই এই নতুন ব্রিজের উদ্বোধন করবেন।
পূর্তদপ্তর সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়াটাই খুব কঠিন ব্যাপার। কারণ বহু মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। তাই কর্মীদের সুস্থ রাখতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ‘দক্ষিণে মাঝেরহাট ব্রিজও কোভিডের প্রথম ঢেউয়ের সময় ঠিক একই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। তাই আমরা আশাবাদী, যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই ব্রিজের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে’, জানিয়েছেন পূর্তদপ্তরের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। উল্লেখ্য, প্রথমে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন টালা ব্রিজের কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে বলে মনে করেছিলেন পূর্তদপ্তরের কর্তারা। রাজ্যের দাবি, সুপার স্ট্রাকচারের কাজের জন্য কমিশনার অব রেলওয়ে সেফটির ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে ছ’মাস ধরে আলাপ-আলোচনা চালানোর পরে। অভিযোগ, ছাড়পত্র পেতে দেরি হওয়ায় এই কাজ শুরু করতেই ১০ ডিসেম্বর লেগে গেল। নির্মীয়মাণ এই ব্রিজ একাধিকবার পরিদর্শনে করেছেন পূর্তমন্ত্রী মলয় ঘটক। তিনিও রেলের তরফে ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে টালবাহানার অভিযোগ তুলেছেন।
যদিও রেল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানান, আমরা ছাড়পত্রের জন্য ‘ফর্মাল অ্যাপ্লিকেশন’ পেয়েছি ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর। আর ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে সেই বছরের ৮ ডিসেম্বর। অর্থাৎ দু’দিনের মাথায়। পুরনো তিন লেনের টালা ব্রিজ তৈরি হয়েছিল ১৯৬২ সালে। উত্তর শহরতলির সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল এই ব্রিজ। মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পরেই রাজ্যের সমস্ত সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। পুরনো ব্রিজ ভেঙে নতুন করে গড়ার পরামর্শ দিয়েছিল বিশেষজ্ঞ সংস্থা রাইটস। সেতু বিশেষজ্ঞ বি কে রায়নাও একই মতামত জানিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে রিপোর্ট দিয়েছিল নবান্নকে। রিপোর্ট খতিয়ে দেখেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় পুরনো টালা ব্রিজ ভেঙে নতুন করে তৈরি করার। নতুন ব্রিজ তৈরি করার দায়িত্ব পায় ‘লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো’। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে। পুরনো সেতুর ভার বহনের ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫০ টন। সেই জায়গায় নতুন ‘কেবল স্টেইড’ রেল ওভারব্রিজের ভারবহন ক্ষমতা হল প্রায় ৩৮৫ টন। ব্রিজ তৈরির সমস্ত খরচ বহন করছে রাজ্য সরকার। এই ব্রিজ তৈরি করতে প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। নতুন টালা ব্রিজটি ৮০০ মিটার লম্বা ও প্রায় ১৯ মিটার চওড়া।