ট্রেনে ওঠার আগে খাবার ভিন রাজ্যের পরিযায়ীদের
পথ দেখাচ্ছে বাংলা। ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর সময়েও।
লকডাউনে ভিন রাজ্যে আটকে পড়া বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে অসহযোগিতার অভিযোগ নিয়ে সরগরম রাজনীতি। এই নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে তো বটেই, যে সব রাজ্যে বাংলার শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন, সেই সব রাজ্যের সরকারকেও চিঠি পাঠিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা। এই অবস্থায় বাংলায় এতদিন লকডাউনে আটকে থাকা অন্যান্য রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকরা যখন নিজেদের রাজ্যে ফিরছেন, সেই সময়ে সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সরকারি বাসে চাপিয়ে ভিন রাজ্যের ওই শ্রমিকদের পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে রেল স্টেশনে। ট্রেনে ওঠার আগে প্রত্যেকের থার্মাল স্ক্যানিং করছে রাজ্য সরকার। তা ছাড়া, রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা হচ্ছে, তার পর তাঁদের ঘরে ফেরার ট্রেনে তোলা হচ্ছে। খাওয়ানোর বদলে কোনও কোনও ট্রেনের যাত্রীদের হাতে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত বাংলা থেকে মোট ৬টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ছেড়েছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় কলকাতা স্টেশন থেকে একটি স্পেশ্যাল ট্রেন পরিযায়ীদের নিয়ে লখনৌয়ের উদ্দেশে রওনা হয়। ট্রেনটিতে প্রায় ৩০০ যাত্রী ছিলেন। ট্রেন ছাড়ার তিন ঘণ্টা আগেই যাত্রীদের স্টেশনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাঁদের প্রত্যেকের থার্মাল স্ক্যানিং করা হয়। জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টের মতো করোনার কোনও উপসর্গ আছে কি না, সেটা ভাল করে জেনেবুঝে নেন স্বাস্থ্য কর্মীরা।
বুধবার লখনৌ-স্পেশ্যাল ট্রেনের যাত্রীদের খাবারের প্যাকেটে দেওয়া হয়েছে নামী ব্র্যান্ডের টিফিন কেক ও প্যাটি, ডিম সেদ্ধ, কলা, ভুজিয়ার প্যাকেট, দু’টো করে সন্দেশ। মঙ্গলবার সিওয়ানের উদ্দেশে যে স্পেশ্যাল ট্রেন রওনা দিয়েছে, তার যাত্রীদের মেনুতে ছিল ভাত, টক ডাল, নিরামিষ তরকারি, মাছের কালিয়া ও দু’টো করে মিষ্টি। সোমবার বাংলা থেকে নিজেদের রাজ্যে রওনা হওয়া ট্রেনের যাত্রীদের দেওয়া হয়েছিল খিচুড়ি, পটল ও বেগুন ভাজা, মিষ্টি।
ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের আপ্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকাতা পুরসভার এক কর্তার কথায়, ‘স্পেশ্যাল ট্রেনে যাঁরা এই রাজ্য থেকে নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন, তাঁদের প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তার পরই ট্রেনে উঠতে দেওয়া ট্রেনে উঠে তাঁরা খাবার পাবেন কি না, সেই ব্যাপারে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাই, সরকারি উদ্যোগে তাঁদের খাইয়ে ট্রেনে তোলা হচ্ছে।’
লখনৌগামী ট্রেনের যাত্রী নরেন্দ্র দুবে ফোনে ‘এই সময়’-কে বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। খবরেই দেখছিলাম, স্পেশ্যাল ট্রেনে কোনও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে আমাদের যে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে, তাতে একরাত কাটিয়ে দেওয়া যাবে।’
তবে বাংলার পরিযায়ীদের নিয়ে যে সব ট্রেন ভিন রাজ্য থেকে ফিরছে, তার যাত্রীদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ অব্যাহত। গুজরাটের ভদোদরা থেকে রওনা হওয়া হাওড়াগামী শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের যাত্রীরা রবিবার সাঁইথিয়া স্টেশনে নেমে ট্রেনের গার্ডকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, ২৮ মে ভদোদরা থেকে রওনা দিয়ে ৩০ তারিখ সকালে ট্রেনটির হাওড়ায় পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের ২৪ ঘণ্টারও বেশি পেরিয়ে গেলেও ট্রেনটি হাওড়ায় পৌঁছয়নি। রবিবার, ৩১ মে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ট্রেনটি সাঁইথিয়া পৌঁছয়। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ট্রেনে সঠিক সময়ে খাবার দেওয়া হচ্ছিল না, পশ্চিমবঙ্গে ট্রেনটি প্রবেশ করতেই খাবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। তা ছাড়া, ট্রেনে ওঠানোর আগে তাঁদের সবাইকে ঠিক মতো থার্মাল স্ক্যানিং করা হয়নি বলেও যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন।