রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ফ্লোরাইড অধ্যষিত এলাকায় ২০২৪ এর মধ্যেই পরিস্রুত জল প্রকল্প চালুর উদ্যোগ

January 16, 2022 | 2 min read

বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম বা দক্ষিণ দিনাজপুরের মানুষের ফ্লোরাইড মিশ্রিত জলপানের অভিশাপ ঘুচতে চলেছে। ২০২৪ সালের মধ্যে তাঁদের বাড়িতে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগচ্ছে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দপ্তর। তার আগে, চলতি বছরের মার্চের মধ্যে সমস্যার সমাধান করে ফেলতে চাইছে তারা। যতদিন না নলবাহিত পানীয় জল দেওয়া যাচ্ছে, ততদিন কমিউনিটি সিস্টেমে জল সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দপ্তরের একটি সূত্রের দাবি, শুধু ফ্লোরাইড নয়, আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেও যতটা সম্ভব এই পরিষেবা দেওয়া হবে। তবে আর্সেনিকের চেয়ে ফ্লোরাইড অধ্যুষিত এলাকায় কাজটা কিছুটা সহজ। কারণ এরাজ্যে আর্সেনিকের চেয়ে ফ্লোরাইডের উপস্থিতি অনেকটা কম এবং নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সেটি সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা করিয়ে ফ্লোরাইডের যে মাত্রা পাওয়া গিয়েছে, তাও অনেকাংশেই কম। এই কমিউনিটি পর্যায়ে জল-সরবরাহে উপযোগী ভূমিকা পালন করতে চলেছে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।

আইআইটি খড়্গপুরের উদ্যোগে ল্যাটেরাইট ফিল্টার ব্যবহার করা হচ্ছে কোথাও। তা দিয়ে মাটির তলার জল শোধন করে পানের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। সিস্টার নিবেদিতা গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজের এক অধ্যাপকের আবিষ্কৃত অত্যাধুনিক ফিল্টারও ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাক্টিভেটেড কার্বন, ন্যানোমেটেরিয়াল সমৃদ্ধ বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার পাইলট প্রকল্পের যে ব্যবহার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে অনেকগুলি বাস্তবিক ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেগুলির মাধ্যমেই বড় আকারে ভূগর্ভস্থ জল শোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই এই ফিল্টার করা ভূগর্ভস্থ পানীয় জল প্রকল্পগুলি চালুর লক্ষ্যমাত্রা ছিল। অনেকগুলিই হয়ে গিয়েছে। তবে তবে পুরো কাজ শেষ হতে মার্চ পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে তাঁর বক্তব্য, এই বিষয়গুলি অবশ্য খুবই আপৎকালীন এবং খুবই দুর্গম এলাকার জন্য। নদীর জল শোধন করে কলের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা চালু হয়ে গেলে এগুলির প্রয়োজন ফুরবে।

মুখ্যমন্ত্রীর ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পের মাধ্যমেই সমস্যার সিংহভাগ সমাধান হবে বলে দপ্তরের আশা। এর পাশাপাশি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবির ঋণে বেশকিছু প্রকল্প চলছে। যার মাধ্যমে দামোদর নদ এবং মুকুটমণিপুরে কংসাবতী নদীর জলাধার থেকে জল তোলা হচ্ছে। সেগুলি পৌঁছে যাচ্ছে বাঁকুড়া, মেজিয়া, বড়জোড়া, সিমলিপাল প্রভৃতি অঞ্চলে। বীরভূমের নলহাটিতেও একটি বড় প্রকল্প রয়েছে। পুরুলিয়ায় ন’টি ব্লকে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জাপানি সংস্থা জাইকার সহযোগিতায় একটি প্রকল্প চালু হয়েছে। রাজ্যের ফ্লোরাইড টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান এস পি সিংহ রায় বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পে যে গতিতে কাজ এগচ্ছে, তাতে ২০২৪-২৫ সালের মধ্যে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে যাওয়া উচিত। আর্সেনিক অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ ইতিমধ্যেই অনেকটা শেষ হয়ে গিয়েছে। জলস্বপ্ন প্রকল্পতেও রাজ্য দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকছে। তাই আমি আশাবাদী।

খুব কম পর্যায়ে ফ্লোরাইড থাকা দাঁতের পক্ষে ভালো। তবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার বেশি হলেই তা হাড়, অস্থিসন্ধি প্রভৃতির ক্ষতি করতে থাকে। গাঁটের যন্ত্রণা বাড়ে। পরবর্তীতে তা আরও বড় ক্ষতি ডেকে আনে। অন্ধ্রপ্রদেশে ষাঁড়ের শরীরে প্রথম ফ্লোরাইডের অস্তিত্ব মেলে। এই বিষে পশুগুলি প্রায় পঙ্গু হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে এ রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও ফ্লোরাইডের অস্তিত্ব মেলে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#drinking water

আরো দেখুন