দেশ বিভাগে ফিরে যান

নির্বাচনী ময়দানে বিজেপির রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হাতিয়ার কি কেন্দ্রীয় বাজেট? উঠছে প্রশ্ন

January 20, 2022 | 3 min read

মোদীর শাসনকালে দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটকেই হাতিয়ার রূপে ব্যবহার করে আসছে বিজেপি। বিগত বছরগুলিতে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতেই উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে সংসদের বাজেট অধিবেশনকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। ইচ্ছে মতো এগিয়ে আনা হয়েছে বাজেট পেশের দিন। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়!


করোনা আবহেই আগামী ৩১শে জানুয়ারী শুরু হতে চলেছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। আগামী ১লা ফেব্রুয়ারী পার্লামেন্টে বাজেট পেশ হওয়ার কথা। 
যদিও ভারতীয় সংসদে ফেব্রুয়ারী মাসের সর্বশেষ কর্ম দিবসের (working day) দিনটিতেই বাজেট পেশ করার রেওয়াজ ছিল। ২০১৭ সালে ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অরুন জেটলি এই ঐতিহ্য ভাঙেন, প্রায় চার সপ্তাহে এগিয়ে এনে ২০১৭ থেকে ফেব্রুয়ারীর প্রথম দিনেই সংসদে বাজেট পেশ করা শুরু হয়। মোদী জামানায় রেল বাজেটেরও অপমৃত্যু ঘটেছে। ২০১৬ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থ বাজেট পেশের কয়েকদিন আগে রেল বাজেট পেশ করার নিয়ম ছিল। ২০১৭ সালে মোদীর আমলে, কংগ্রেসের নিরবতার সুযোগে বিজেপি সরকারের ভারতের ৯২ বছরের ঐতিহ্যবাহী পৃথক রেল বাজেট পেশের প্রথার অবলুপ্তি ঘটায়। সংসদে আলোচনার পরিসর বন্ধ করে দিয়ে, বিরোধীদের আড়াল করে এখন রেল বাবদ অর্থ বরাদ্দ করা হয়। বিজেপি সরকার রাজ্যসভা ও লোকসভার গরিমা নানাভাবে নষ্ট করে চলেছে, তার মধ্যেও এটিও একটি। ঠিক যেমন করে, গণতন্ত্রকে হত্যা করে বিজেপি কৃষি বিল পাস করিয়েছিল। 


আদপে নির্বাচনী ময়দানে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করতেই বাজেটকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে বিজেপি। বাজেটের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়, বিভিন্ন জনকল্যানমূলক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়, কর ব্যবস্থার সংস্কার করা হয়, সাধারণ মানুষের নানান সুযোগ সুবিধার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়। বিগত পাঁচ বছর যাবৎ বিজেপি সুপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রাজ্যের ভোটের ঠিক প্রাক মুহূর্তে কেন্দ্রীয় বাজেটকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। ২০১৭ সালে পাঞ্জাব ও গোয়া বিধানসভা নির্বাচনের তিনদিন আগে দিল্লিতে বাজেট পেশ করা হয়েছিল। উত্তরাখণ্ড, মণিপুরে নির্বচান তখনও বকেয়া ছিল। কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের ১০ দিনের মাথায় উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন হয়। আসন্ন নির্বাচনের কারণে নির্বাচন কমিশন ঐ রাজ্যগুলোতে নির্বাচনী আচরণ বিধিকে লাগু করেছিল। কোন রাজনৈতিক দলই যাতে ভোটারদের প্রভাবিত করতে না পারে, সেই কারণেই নির্বাচনী আচরণ বিধি জারি করা হয়। সেই আচরণ বিধিকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, বাজেটকে হাতিয়ার করে বিজেপি কাজ মিটিয়ে নেয়। ১৬ টি রাজনৈতিক দল ১লা ফেব্রুয়ারী বাজেট পেশের বিরোধীতা করে, কিন্তু তাদের বিরোধীতাকে নস্যাৎ করে বাজেট পেশ করে বিজেপি। নোটবন্দির তুঘলকি সিদ্ধান্তের ভারে জর্জরিত বিজেপি, বাজেটে কর ছাড়সহ নানান ভূর্তকি দিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোলের চেষ্টা করে। এবং ভোটদাতাদের প্রভাবিত করে রাজনৈতিক ফসল তোলে। একইভাবে ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগেও বাজেটকে হাতিয়ার করেছিল বিজেপি। ভোট অন অ্যাকাউন্ট বাজেটের নামে ‘ভিশন ২০৩০’ এর রূপরেখা তৈরি করতে বাজেটে মিথ্যে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেয় বিজেপি। ভোট বৈতরণী পেরোতে নির্বাচনের আগে নির্লজ্জভাবে বিজেপি বারবার এ জিনিস করে চলেছে।


বাংলায় একুশের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক একমাস আগে, এ রাজ্যের জাতীয় সড়ক ও সড়ক নির্মাণ বাবদ কেন্দ্রীয় বাজেটে পঁচিশ হাজার কোটি ( ২৫,০০০ কোটি) টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। যদিও বিজেপির এই নির্বাচনী চমক বাংলার ভোটদাতাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কেরল ও তামিলনাড়ুর জন্যেও নির্চাবনের আগে বাজেটে বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতীতের এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে যেখানে নির্বাচনের কারণে সংসদের বাজেট পেশের নির্দিষ্ট সময়কলকে বিলম্বিত করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ ২০১২ সালের ইউপিএ সরকারের বাজেটে অধিবেশনের কথাই বলা যেতে পারে। ঐ একই সময়ে বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন থাকায়, সংসদের বিরোধী দলনেতা অরুন জেলটির আপত্তিতে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাজেট অধিবেশন। ২০১২ সালে ১৬ই মার্চ সংসদে বাজেট পেশ হয়েছিল। এর আগে ২০০৬ সালের মে মাসে কেন্দ্রের মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী অর্জুন সিংহ, কেন্দ্র সরকারের আর্থিক সহায়তায় চলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর জন্য ২৭ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেন। তখন পাঁচ রাজ্য নির্বাচন থাকায় নির্বাচন কমিশন সচেতনভাবে এই ঘোষণা আপাতভাবে রদ করে। যদিও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন শাসক দল বিজেপির প্রতি অনেক নমনীয় হয়ে গিয়েছে।
২০২২ সালের ৮ই জানুয়ারী নির্বাচন কমিশন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণা করেছে। রাজ্যগুলিতে নির্বাচনী আচরণ বিধিও লাগু হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি সরকার ১লা ফেব্রুয়ারী বাজেট পেশ করতে চলেছে। বিজেপি সরকার ইচ্ছা করলেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী ফল প্রকাশ হলে তারপর, সংসদে বাজেট পেশ করতে পারতো। কিন্তু তাহলে তো আর ভোটদাতাদের প্রভাবিত করা যাবে না। সরকারে থাকার সুবাদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিজেপি বাজেটেকে কার্যত নিজেদের মিথ্যে প্রতিশ্রুতির নির্বাচনী ইস্তাহারে পরিণত করেছে। নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত নির্বাচনী আচরণ বিধি মানার নূন্যতম প্রচেষ্টাও বিজেপির মধ্যে পরিলক্ষিত হয় না। বলাইবাহুল্য ভারতীয় সংসদের ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের প্রতি বিজেপি বিন্দুমাত্রও শ্রদ্ধাশীল নয়।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#bjp, #elections, #Budget, #Nirmala Sitharaman

আরো দেখুন