বিধানসভায় বাংলার আধিকারিকদের হুমকি রাজ্যপালের,অসৌজন্য বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের
এবার রাজ্যের অফিসারদের হুমকি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের অফিসাররা সংবিধান মেনে চলছেন না। তিনি বলেন, অফিসাররা জানেন না, রাজভবন কী করতে পারে। আমি বহুবার অফিসারদের বলেছি, সংবিধানের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করুন। রাজ্যপাল ডাকলেও মুখ্যসচিব, রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজভবনে আসেন না। বার বার তথ্য চেয়েও পাওয়া যায় না। এটা কোন ধরনের সংস্কৃতি। মুখ্যমন্ত্রীকেও ছেড়ে কথা বলেননি ধনখড়। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, সংবিধান সম্পর্কে কোনও ধারনাই নেই মুখ্যমন্ত্রীর।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিধানসভা লনে ভীমরাও আম্বেদকরকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যপাল। তারপরেই সাংবাদিক বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থেকে শুরু করে শিক্ষা ব্যবস্থা, ভোটারদের স্বাধীনতা, বাংলার গণতন্ত্র, বিধানসভার অধ্যক্ষের ভূমিকা, মিডিয়ার আচরণ, মা ক্যান্টিন-সহ হেন বিষয় নেই, যার সমালোচনা করেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
রাজ্যপালকে পালটা তোপ বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় বিধানসভায় এসে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলেন বলে অভিযোগ অধ্যক্ষের। তিনি বলেন, রাজ্যপাল শুধু আম্বেদকরকে শ্রদ্ধা জানাবেন বলে আমাকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপাল যে ভাবে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুখ্যমন্ত্রীকে, আমাকে বিদ্ধ করলেন তা ঠিক হয়নি বলে আমি মনে করি। তিনি রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করতে পারতেন তা না করে আম্বেদকরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে এক গাদা কথা বলে গেলেন।
রাজ্যপাল যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন অল্প দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি প্রমুখ। অধ্যক্ষ রাজ্যপালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানান। তার পরই ধনখড় সাংবাদিক সম্মেলনে তীব্র ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। তিনি অধ্যক্ষের ভূমিকারও সমালোচনা করে বলেন, অধ্যক্ষ আমাকে ব্ল্যাক আউট করছেন। অধ্যক্ষের জানা উচিত রাজ্যপালের ক্ষমতা কতটা। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিল আটকে রাখার মিথ্যে অভিযোগ কড়া হচ্ছে। আমার টেবিলে কোনও বিল আটকে থাকে না।
জবাবে বিধানসভার অধ্যক্ষ জানান, রাজ্যপালের কাছে অনেক বিলই সইয়ের অপেক্ষায় রয়ে গিয়েছে। হাওড়া পুরসভার বিল, গণপিটুনি বিল আজও আটকে রেখেছেন। তিনি বাংলা ভালোই বোঝেন। বাংলায় কথাও বলেন। রাজভবনে বিলের ভাষা তর্জমা করার জন্য অফিসাররাও আছেন। তবু, অযথা তিনি বিল আটকে রাখেন। তাঁর পছন্দমতো শব্দ বিলে রাখতে হবে বলে দাবি করেন রাজ্যপাল। অধ্যক্ষ বলেন, জানি না উনি কার মুখপাত্র হিসেবে এসব কথা বলছেন। অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক জায়গা থেকে কথা বলছেন। আমি আমার সাংবিধানিক এক্তিয়ার থেকে কথা বলছি। আমি কোনও বিতর্কে যেতে চাই না।’
অধ্যক্ষ বলেন, এর আগে এরকম ঘটনা বিধানসভায় আগে কখনও ঘটেনি। আজ যা হল, রাজ্যপাল এটা না করলেই ভালো করতেন। আমি এর আগে অনেক রাজ্যপাল দেখেছি। তাঁদের সংস্পর্শে এসেছি। কিন্তু কেউ এই রাজ্যপালের মতো আচরণ করেননি।