প্রতিশ্রুতিই সার! পারমাদনে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারগুলোকে রাজ্য সাহায্য করলেও, এখনও মেলেনি কেন্দ্রের অনুদান
গত নভেম্বরের সেই দিনটার কথা ভাবলে আজও শিউরে ওঠেন বাগদার পারমাদন গ্রামের বাসিন্দারা। শবদাহ করতে যাওয়ার সময় নদীয়ার হাঁসখালিতে পথ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন গ্রামের ১৭ জন বাসিন্দা। জখম হয়েছিলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আজও সুস্থ ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না অনেকেই। গত ২৭ নভেম্বরের ঘটনার পর নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিল সবাই। রাজনৈতিক দলের নেতারাও দিয়েছিলেন আশ্বাস। সময়ের সাথে সবাই যেন ভুলেই গিয়েছেন। কিন্তু স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভুলতে পারেননি পরিবারের সদস্যরা। আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন অনেকেই, মেলেনি সে সাহায্য। শুধুমাত্র রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি মতো দু’লক্ষ টাকা পেয়েছেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার। কেন্দ্রের তরফে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মিললেও, আজও প্রতিশ্রুতিই রয়ে গিয়েছে। বিজেপির কোনো নেতাই আর খোঁজ নেননি বলে দাবি গ্রামের বাসিন্দাদের।
মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনার পর টুইট করে শোকবার্তা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করে শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পারমাদন গ্রামে যান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। গোটা বিষয়টি তদারকি করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মত সেদিনই শব দাহের আগেই রাজ্য সরকারের তরফে নিহতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন তিনি। বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও পরিবারের সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ঘটনার বেশ কয়েকদিন পর পারমাদন গ্রামে যান বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। অসহায় পরিবারগুলির পাশে থাকার আশ্বাসের পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফে আর্থিক সাহায্যের কথাও ঘোষণা করেন। নিহতদের পরিবারকে দু’লক্ষ করে টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলেন মন্ত্রী। এরপর দু’মাসেরও বেশি পার হয়েছে। আজও মেলেনি কেন্দ্রের সাহায্য। বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ঘটনার প্রায় দশদিন পর শুধুমাত্র রাজনীতি করার জন্য শান্তনু ঠাকুর এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বিজেপি মৃত্যু নিয়েও রাজনীতি করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা মতো মৃতদেহ দাহ করার আগে হতভাগ্য পরিবারগুলির হাতে চেক তুলে দিয়েছেন।
শুক্রবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা হল অর্চনা মুহুরির সঙ্গে। ঘটনার দিন শাশুড়িকে দাহ করতে যাচ্ছিলেন তিনি। ছিলেন স্বামী স্বপন মুহুরি, মেয়ে, বউমা ও পাঁচ বছরের নাতনি। ছেলে অন্য গাড়িতে ছিলেন। দুর্ঘটনায় মারা যান মেয়ে, বৌমা ও নাতনি। আঘাত পান অর্চনা দেবী ও তাঁর স্বামী স্বপনবাবু। দেখভালোর লোক না থাকায় বাড়ির দুধেল গাই কম দামে বিক্রি করতে হয়েছে। অর্চনাদেবী বলেন, ঘটনার পর অনেকেই অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু লক্ষ টাকা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। এখনও বুকে বেল্ট বেঁধে চলাফেরা করেন গ্রামের বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ মুহুরি। রবীন্দ্রনাথ বলেন, শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, ৫০ হাজার টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। আমরা কিছুই পাইনি। সেদিন আহত হয়েছিলেন বাদল সমাদ্দারও। তাঁর কোমরে অস্ত্রোপচার হওয়ায় এখনও শয্যাশায়ী। তাঁরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ঘটনার পর মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এসে বলেছিলেন, সাহায্য করবেন। কিন্তু কোথায় সে সাহায্য!