রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ৪ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের (Jagdeep Dhankar) অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চার বার চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সোমবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অত্যন্ত চড়া সুরে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে চার-চারবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত রাজ্যপালকে সরানো হল না। তিনি প্রতিটা কাজে আমাদের বাধা দিচ্ছেন। একাধিক ফাইল আটকে রেখে দিয়েছেন। এ ভাবে সরকার চালানো যায় না।’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘প্রধানমন্ত্রী একটি চিঠিরও জবাব পর্যন্ত দেননি। এর পর মানুষ ও আমাদের সংসদীয় দল সিদ্ধান্ত নেবে।’
রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত চলছে অনেক দিন ধরেই। ধনখড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রোজ টুইট করে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। তাঁর টুইটের কথা উল্লেখ করে এদিন নবান্নে মমতা বলেন, ‘রাজ্যপাল সুপার পাহারাদারি চালাচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি টুইটে আমাদের কাউকে না কাউকে আক্রমণ করেই চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে আমি রাজ্যপালকে আমার টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিলাম।’
রাজ্যপালকে টুইটে ব্লক করে দেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নবান্ন এবং রাজভবনের সংঘাত এদিন নতুন মোড় নিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ ভাবে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালকে ব্লক করতে পারেন কি না, তা নিয়ে নানা চর্চা শুরু হয়েছে। নেত্রীর দেখাদেখি এদিন রাজ্যপালকে টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করে দিয়েছেন রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও। শুধু মুখ্যমন্ত্রীকেই নয়, রাজ্যপাল প্রায় দিনই নানা প্রশ্নে টুইট ট্যাগ করেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব এবং রাজ্য পুলিসের ডিজিকেও। এখন দেখার, তাঁরাও রাজ্যপালকে তাঁদের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করেন কি না।
গত ২৫ জানুয়ারি, বিধানসভা চত্বরে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন রাজ্য সরকারকে। সে সময় অদূরেই উপস্থিত ছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের সাংবাদিক বৈঠক শেষ হতেই অধ্যক্ষ সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা তোপ দেগে বলেন, ‘রাজ্যপাল অসৌজন্যমূলক আচরণ করলেন। এরকম রাজ্যপাল আগে দেখিনি।’ এর পর বিধানসভায় আসতে চাইলে রাজ্যপালের কাছে কারণ জানতে চাওয়া হবে বলে অধ্যক্ষ জানান। এর দু’দিন পরই তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্থির হয়, বাজেট অধিবেশনের সময় সংসদের উভয় কক্ষেই রাজ্যপালের অপসারণ চাইবে তৃণমূল। রাজ্য বিধানসভাতেও রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চায় শাসকদল।
এদিনই রাষ্ট্রপতির ভাষণের মাধ্যমে সংসদে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ শেষ হওয়া মাত্রই লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে রাজ্যপালের অপসারণের আর্জি জানান। এর ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে রাজ্যপালকে তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে ব্লক করার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে রাজ্যপালের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চার বার চিঠি দিয়েছেন, সে কথাও জানাতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী।