দেশের কৃষকদের ঠকাচ্ছে মোদী সরকার, ‘বিশ্বাসঘাতক দিবসে’ রাষ্ট্রপতিকে চিঠি কিষান মোর্চার
‘আপনিই দেশের প্রধান। দেশের কৃষকদের যেভাবে ঠকাচ্ছে মোদী সরকার, তা নিয়ে কেন্দ্রকে আপনি সতর্ক করুন।’ সোমবার কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতক দিবস’ পালনে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দকে এই চিঠিই পাঠালেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় নিয়ে এদিন রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি পাঠিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে এদিন কিষান মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, যদি কেন্দ্র কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে থাকে, তাহলে ফের আন্দোলন শুরু করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প থাকবে না। যেহেতু কেন্দ্রের মোদী সরকার কোনও প্রতিশ্রুতিই পালন করেনি, তাই এদিন বিশ্বাসঘাতক দিবস পালন করা হয়। সেইমতোই দেশের প্রত্যেকটি জেলা এবং ব্লকস্তরে এই কর্মসূচি পালন করেন কৃষকরা। বিভিন্ন স্থানে পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা।
বিশেষ করে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, হিমাচলপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, গুজরাত, ত্রিপুরায় বেশি সাড়া মিলেছে বলে দাবি করেছেন কৃষকরা। কিষান মোর্চা জানিয়েছে, দিল্লিতেও তাদের কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ব্লক এবং জেলাস্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, গত ৯ ডিসেম্বর কেন্দ্র যেসব প্রতিশ্রুতি পালনের আশ্বাস দিয়ে কিষান মোর্চাকে চিঠি পাঠিয়েছিল এবং যার উপর ভরসা করে আন্দোলন স্থগিত করলেন চাষিরা, সেই সংক্রান্ত কোনও প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি মোদী সরকার।
রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে কৃষকরা লিখেছেন, ‘ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী এমএসপি কমিটি তৈরি করার কথা বলেছিলেন। পরে কৃষিমন্ত্রক সেই ঘোষণার পুনরাবৃত্তি করে। কিন্তু বাস্তব হল, এহেন এমএসপি কমিটি নিয়ে পরে আর কোনও উচ্চবাচ্যই করেনি সরকার। আন্দোলন চলাকালীন কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্র তো বটেই, এমনকী মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশ কোনও রাজ্য সরকারই এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়নি। শুধুমাত্র হরিয়ানা সরকার কাগজে-কলমে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবে তাও অসম্পূর্ণ রয়েছে।’
শহিদ কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারেও কেন্দ্র নির্দিষ্ট মর্মে আশ্বাস দিলেও সেটি এখনও পর্যন্ত পূরণ করা হয়নি বলেই জানিয়েছে কিষান মোর্চা। রাষ্ট্রপতির উদ্দেশে পাঠানো চিঠিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে সরাসরি লখিমপুর খেরি কাণ্ডের প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, ‘সিটের রিপোর্টের পরেও অজয় মিশ্র টেনির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় থেকে যাওয়া আদতে অসাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক নিয়মের পরিপন্থী।’
এদিকে, সংযুক্ত কিষান মোর্চার দেশ জুড়ে ডাকা ‘বিশ্বাসঘাতক দিবস’ এদিন কলকাতা সহ রাজ্যের নানা জেলায় পালিত হয়। ধর্মতলায় বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের নেতাদের উপস্থিতিতে পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কুশপুতুল। মোর্চার রাজ্য নেতারা এদিন জানিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের বিধানসভা ভোটে বাঙালি প্রধান এলাকায় তাঁরা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচারে যাবেন।