সাধারণ বাজেটে বরাদ্দ কমল ১০০ দিনের কাজে, খাদ্য সারেও ভর্তুকি ছাটাই
লকডাউনে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরা লক্ষ লক্ষ মানুষের একমাত্র সম্বল ছিল একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প।

লকডাউনে কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরা লক্ষ লক্ষ মানুষের একমাত্র সম্বল ছিল একটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প। ১০০ দিনের কাজ। তার সাহায্যে গোটা করোনা পর্বে সচল রাখা হয় গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা। মহামারী নিয়ন্ত্রণে আসা মাত্র কোপ পড়ল সেই প্রকল্পে। কমিয়ে দেওয়া হল বাজেট বরাদ্দ। এক ধাক্কায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, সার হোক বা খাদ্য, এমনকী গরিবদের জন্য রান্নার গ্যাসে পর্যন্ত মঙ্গলবার ব্যাপক হারে ভর্তুকি ছাঁটাই করল নরেন্দ্র মোদি সরকার। সার্বিকভাবে এবার বাজেটে প্রায় ২৭ শতাংশ ভর্তুকির বরাদ্দ কমিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোর ধাক্কা লাগবে বলেই আশঙ্কা ওয়াকিবহাল মহলের। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বরাদ্দ কমানো নিয়ে মোদি সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা অমিত মিত্র।
এদিন সংসদে পেশ করা বাজেট নথিই বলছে, ১০০ দিনের কাজে ২০২১-২২ সালের ‘রিভাইজড এস্টিমেট’ বা সংশোধিত বরাদ্দ ছিল ৯৮ হাজার কোটি টাকা। সেটি ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে হল ৭৩ হাজার কোটি। অবশ্য গতবারের বাজেটেও একই অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খরচ বাড়ে। তাকে বলা হয় ‘রিভাইজড এস্টিমেট’। লকডাউন-আনলক পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশই মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি প্রোগ্রাম বা ১০০ দিনের কাজের ভরসায় দিন গুজরান করেছেন। কিন্তু এখন সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। তাই আর এই প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। এমনই ব্যাখ্যা কেন্দ্রের। কিন্তু সারের ভর্তুকি কমানো? ঘটা করে গরিবদের রান্নার গ্যাস দেওয়ার যে প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এত হাঁকডাক, সেখানেও বরাদ্দে ছাঁটকাট?
গরিবদের এলপিজি সংযোগের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-’২২) ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। কিন্তু এবার বরাদ্দ হল মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। এমনকী সার্বিকভাবে এলপিজি ভর্তুকিও ৬ হাজার ৫১৬ কোটি ৯২ লক্ষ থেকে কমিয়ে হয়েছে ৫ হাজার ৮১২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। একইভাবে ইউরিয়া হোক বা অন্য নিউট্রিয়েন্ট-কেন্দ্রিক সারের ভতুর্কিতেও বাজেট বরাদ্দ ব্যাপক কমিয়েছে কেন্দ্র। ছিল ১ লক্ষ ৪০ হাজার ১২২ কোটি টাকা। হল ১ লক্ষ ৫ হাজার ২২২ কোটি। বাদ যায়নি খাদ্যের উপর ভর্তুকিও। ২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৬৯ কোটি থেকে কমে হয়েছে ২ লক্ষ ৬ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা।
অর্থাৎ, ভর্তুকিহীন পণ্য বা পরিষেবার ক্ষেত্রে খরচের ভার চাপছে আম আদমির কাঁধে। তাদের হাতে অর্থের জোগানেরও দিশা দেননি নির্মলা। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতি সঙ্কটে পড়বে। যেমন অমিত মিত্র মনে করছেন, ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের ফলে শ্রমদিবসেও কোপ পড়বে। অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ১০ শতাংশ টাকা দিত রাজ্য সরকার। এখন তা বেড়ে ৪০ শতাংশ। এবার কেন্দ্র বরাদ্দ কমানোয় রাজ্যের উপর চাপ বাড়তে পারে। গত আর্থিক বছরে শ্রমদিবসের টার্গেট ছিল ৪১ কোটি। চলতি অর্থবর্ষে তা কমিয়ে ২২ কোটি করা হয়। বহু আবেদনের পর শ্রমদিবস বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু আগামী দিনে তা আরও কমানো হবে বলেই ইঙ্গিত বাজেটে। ফলে ভুগবে গ্রামীণ অর্থনীতি।এই মুহূর্তে