ভ্যাকসিনে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে চুপ অর্থমন্ত্রী, চূড়ান্ত হতাশ প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা

কমিয়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজে বিমার বরাদ্দও।

February 2, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

 ‘ডেল্টা’ আর ‘ওমিক্রনে’র মতো কোভিড ভাইরাসের দুই মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট এখনও বিদায় না নিলেও বাজেটে ভ্যাকসিনের জন্য নতুন কোনও অর্থ বরাদ্দ নিয়ে টুঁ শব্দটি করলেন না অর্থমন্ত্রী। গতবার টিকার জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকার কথা ঘোষণা হলেও এবার কোনও উচ্চবাচ্যই নেই। অর্থমন্ত্রী দু’বার মাত্র উল্লেখ করলেন টিকাকরণ শব্দটি। যা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ভালোভাবেই চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তবে স্রেফ টিকায় নতুন কোনও বরাদ্দ তো নয়ই, কোভিড মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পরিকাঠামো প্যাকেজে কোনও অর্থই দিল না মোদি সরকার।  ফলে চূড়ান্ত হতাশ প্রথম সারির কোভিড যোদ্ধারা।


চলতি অর্থবর্ষের (২০২১-২২) জন্য এই প্যাকেজে ১২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এবার তা কমে হল শূন্য। কমিয়ে দেওয়া হল স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ প্যাকেজে বিমার বরাদ্দও। ৮১৩ কোটি থেকে তা হয়ে গেল ২২৬ কোটি টাকা। এই প্যাকেজে কোভিড মোকাবিলায় কাজ করতে গিয়ে কোনও স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়াত হলে তাঁর পরিবার ৫০ লক্ষ টাকা পাবেন বলেই ২০২০ সালের ৩০ মার্চ থেকে প্রকল্প কার্যকরী করেছে কেন্দ্র। এখন কোভিড পরিস্থিতি অনেকটাই সামলে ওঠা গিয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিপদও কমেছে। ঩সেই কারণেই বরাদ্দ কমেছে বলেই ব্যাখ্যা দিয়েছে মন্ত্রক। তবে দুই ক্ষেত্রেই বরাদ্দের অঙ্ক দেখে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রককে ক্ষণে ক্ষণে সাফাই দিয়ে বলতে হচ্ছে, সার্বিকভাবে বরাদ্দ তো বেড়েছে। 


বাজেট তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রক বলছে, গতবার যে বাজেট বরাদ্দ হয়েছিল, তার চেয়ে এবার সার্বিকভাবে ১৬.৫৯ শতাংশ বেড়েছে। গতবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সহ স্বাস্থ্য গবেষণা মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছিল ৭৩ হাজার ৯৩১ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। এবার তা বেড়ে হয়েছে ৮৬ হাজার ২০০ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা। 


একইভাবে বাজেটে ন্যাশনাল টেলি মেন্টাল স্বাস্থ্য কর্মসূচি এবং ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ সিস্টেমের মতো ঘোষণার কথাও প্রচার করা হচ্ছে। করোনা-কালে প্রায় সব বয়সের মধ্যেই মানসিক সমস্যা বেড়েছে। তাই বেঙ্গালুরুর প্রতিষ্ঠান নিমহ্যান্সের সঙ্গে যৌথভাবে দেশের ২৩টি টেলি মেডিসিন সেন্টারের যোগসূত্র বাড়িয়ে মানসিক সমস্যা দূর করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেই বক্তৃতায় জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। 

অন্যদিকে, ডিজিটাল হেলথ ব্যবস্থায় রোগীর যাবতীয় তথ্য ইলেকট্রনিক ব্যবস্থায় নথিভুক্ত হওয়ার পাশাপাশি সার্বিকভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় ভারতকে আত্মনির্ভর করতে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশনে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। ৫৮৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যদিও এরপরেও বাজেটে কোভিড মোকাবিলার জন্য বিশেষ কোনও বরাদ্দের কথা না শোনানোয় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা থামছে না। 

এদিকে, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে তুলোধোনা করল রাজ্যের চিকিৎসক সংগঠনগুলি। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় দিশা দিতে এই বাজেটকে হতাশাজনক বললেও কম বলা হবে। স্বাস্থ্যকে আরও কর্পোরেটমুখী করার সমস্ত চেষ্টা রয়েছে এই বাজেটে। এই বাজেটের পর আরও বেশি দেশবাসী ও কোভিড যোদ্ধা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন’’ বলে তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে বাজেটকে। সিপিএমপন্থী চিকিৎসক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘‘জিডিপি’র অন্তত ২.৫ শতাংশও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করার প্রতিশ্রুতি নেই বাজেটে। করোনা যুদ্ধের সামনের সারির সৈনিকদের জন্য কোনও ঘোষণা নেই। আমরা চূড়ান্ত হতাশ’’।   

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen