আয়করে নেই কোনও সুবিধা, উল্টে ঘুর পথে আয়ের ফন্দি মোদী সরকারের!
আগামী অর্থবর্ষের জন্য বাজেট প্রস্তাবে আয়করে কোনও সুবিধা দেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু জানিয়েছেন, করদাতা যদি রিটার্ন দাখিল করতে কোনও ভুলচুক করেন, তাহলে তিনি তা শুধরে নেওয়ার জন্য কর নির্ধারণের বছর (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার) শেষ হওয়ার পর থেকে দু’বছর সময় পাবেন। এর মধ্যে তিনি তাঁর দাখিল করা আয়কর রিটার্ন ‘আপডেট’ করতে পারবেন। কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী অর্থবর্ষ থেকে যেসব নিয়মটি চালু হতে চলেছে, তা এখানেই শেষ নয়। যদি কোনও করদাতা তাঁর ভুল শুধরে নিতে চান, তাহলে তাঁকে প্রদেয় কর প্রদানের পাশপাশি দিতে হবে ‘বাড়তি’ করও, যা পেনাল্টিরই নামান্তর। তা মোট বকেয়া করের ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ। এর সঙ্গে যোগ হবে বকেয়া সুদ। কর বিশেষজ্ঞদের দাবি, সরকার আসলে এইভাবেই ঘুরপথে রাজস্ব বৃদ্ধির রাস্তায় নেমেছে।
আয়কর পরামর্শদাতারা বলছেন, করদাতাদের সততার উপর ভরসা রেখেই এবারের বাজেট প্রস্তাবে আয়কর আইনের সংশোধনী নতুন ধারা আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। করদাতাদের কাছে এখন দু’রকমের তথ্য থাকে। একটি ‘ট্যাক্স ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট’, অন্যটি ‘অ্যানুয়াল ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট’। প্রথমটি করদাতার একবছরের যাবতীয় আর্থিক কর্মকাণ্ডের সংক্ষিপ্তসার। দ্বিতীয়টিতে থাকে করদাতার যাবতীয় লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য। করদাতা যে রিটার্ন দাখিল করেছেন, তার সঙ্গে যদি ওই রিপোর্টের কোনও অসঙ্গতি থাকে, তাহলে সেই খামতি ঢাকতে তিনি দু’বছর সময় পাবেন। তাঁকে বাড়তি কর মেটাতে হবে। মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্সের প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান অরবিন্দ আগরওয়াল বলেন, যদি কোনও করদাতার কাছে ওই দু’বছরের মধ্যে আয়কর নোটিস যায়, তাহলে তিনি সেই সুযোগ পাবেন না। আবার কালো টাকা বা বেনামি সম্পত্তির হদিশ থাকলেও মিলবে না এই সুবিধা।
ছোট শিল্পের অন্যতম সংগঠন ‘ফসমি’র ডিরেক্টর এবং কর বিশেষজ্ঞ কৌশিক ঘোষ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার মূলত বাড়তি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যেই আয়কর আইনের পরিবর্তন আনতে চাইছে। প্রথমত, দু’বছরের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তাতে বহু করদাতা ইতিমধ্যেই রিটার্ন দাখিল করলেও, সেই রিটার্ন ‘আপডেট’ করবেন। তাঁরা বাড়তি কর মিটিয়ে দায়মুক্ত হবেন। অন্যদিকে, সরকার ১০ বছরের পুরনো খাতা খোলার সুযোগ রেখেছে এবারের বাজেটে। অর্থাৎ করদাতাকে নোটিস ধরিয়ে বাড়তি রাজস্ব আদায়ের পথে হাঁটবে কেন্দ্র।
- যে বছরে করদাতার কর নির্ধারণ হচ্ছে (অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার), তার পর থেকে করদাতা আরও দু’বছর সময় পাবেন ‘আপডেটেড রিটার্ন’ দাখিল করার জন্য। এতদিন সেই কাজের জন্য কর নির্ধারণ বছর শেষ হওয়ার আগের তিনমাস পর্যন্ত সময় পাওয়া যেত।
- নতুন করে রিটার্ন আপডেট করলে যে টাকার আয়কর মেটাতে হবে, তার সঙ্গে যোগ হবে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়তি কর। তার উপর যোগ হবে সুদ।
- যদি কেউ বাড়তি ’রিফান্ড’ পাওয়ার আশায় রিটার্ন সংশোধন করতে চান, তা গ্রাহ্য হবে না। আবার কর কমানোর আবেদনও গ্রাহ্য হবে না।
- যদি করদাতার বিরুদ্ধে কোনও আয়কর তল্লাশি হয়ে থাকে, তাহলে করদাতা এই সুবিধা পাবেন না।
- আয়কর বিভাগ কালো টাকা বা বেনামি সম্পত্তির হদিশ পেলে এই সুযোগ পাবেন না করদাতা।
- ওই দু’বছরের মধ্যে যদি করদাতার কাছে যদি আয়করের কোনও নোটিস যায়, তাহলেও মিলবে না এই সুবিধা।
- আয়করের ওয়েবসাইট করদাতার সারা বছরের যাবতীয় খরচ বা আয়ের তথ্য দিচ্ছে। সেখানে যদি ব্যাঙ্কের সুদ, শেয়ার বিক্রির টাকা, কোনও উৎস্য থেকে পাওয়া ভাড়া প্রভৃতি নানা কারণে আয়ের তথ্য থাকে এবং তা আয়কর রিটার্ন দাখিল করার সময় দেখানো না হয়, তাহলে করদাতা বাড়তি কর মিটিয়ে রেহাই পেতে পারেন।
- যদি করদাতা দু’বছরের মধ্যেও সেই সংশোধন না করেন, তাহলে তাঁকে মোটা অঙ্কের জরিমানা বা গ্রেপ্তারও করা হতে পারে।