রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

পর্যটনে জোয়ার আনতে রাজ্যে ‘ভিলেজ ফেস্টিভ্যাল’, উদ্যোগী নবান্ন

February 4, 2022 | 2 min read

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছরে বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা কমেছে বাঙালির। যাঁরা এর মধ্যেও বেড়াতে গিয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই ঘুরে এসেছেন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ পরিচিতি নেই, এমন কিছু ‘অফবিট’ এলাকা। এই প্রবণতাকেই পুঁজি করে পর্যটন শিল্পে জোর দিতে চাইছে রাজ্য সরকার। মূলত গ্রামীণ অর্থনীতিকে ভিত্তি করেই পর্যটন শিল্পকে অন্য মাত্রায় তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে নবান্ন। রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত জায়গাগুলিকে চিহ্নিত করে রাজ্যজুড়ে ‘ভিলেজ ফেস্টিভ্যাল’ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।

গ্রামবাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে লোকশিল্পের নানা আঙ্গিক। উইকএন্ড ট্যুরের জন্য সেইসব এলাকাকেই বেছে নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার। গত বুধবার পর্যটন দপ্তরের প্রধান সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী এই ভাবনাকে সামনে রেখেই প্রত্যেক জেলাশাসককে চিঠি পাঠিয়েছেন। শুধু পর্যটনের প্রসারের নয়, পাশাপাশি বাংলার কুটির ও লোকশিল্পকে আরও জনপ্রিয় করাই দপ্তরের অন্যতম লক্ষ্য। এতে লাভবান হবে শিল্প, শিল্পী উভয়েই। পূর্ব বর্ধমানের নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল থেকে শুরু করে আউসগ্রামের কাঁথা শিল্প যেমন নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে, তেমনই বিক্রি বাড়বে ডোকরা ও টেরাকোটার মূর্তি‌র। বিকোবে ছৌ-মুখোশও। বাউল গান, ফকির গান, ছৌ-নাচের শিল্পীরাও উপকৃত হবেন এই উদ্যোগে।

ওই চিঠিতে পর্যটন দপ্তরের প্রধান সচিব বলেছেন, প্রথম পর্যায়ে চারটি জায়গায় ‘ভিলেজ ফেস্টিভ্যাল’‌ বা গ্রামীণ পর্যটন উৎসব করা হবে। ২৫ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলায় হবে পটচিত্র মেলা হবে, একইসঙ্গে পুরুলিয়ার চরিদায় চলবে ছৌ মুখোশ মেলা। আবার বাঁকুড়ায় ৪ থেকে ৬ মার্চ বিকনা ডোকরা মেলা ও পাঁচমুড়া টেরাকোটা মেলা হবে।

গ্রামীণ এলাকায় উইকএন্ড ট্যুরের প্রাথমিক পরিকল্পনাও করে ফেলেছে দপ্তর। প্রথম পর্যায়ে তারা তুলে ধরতে চাইছে নদীয়ার গড়ভাঙ্গা বাউল ফকিরের গ্রাম‌ ও মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি ফকির গ্রামকে। পূর্ব বর্ধমানে কাঠের পুতুলের নতুনগ্রাম ও পুরুলিয়ার ছৌগ্রামকেও রাখা হয়েছে এই তালিকায়। এইসব জায়গায় পর্যটনের প্রসার ঘটাতে মেলার মাধ্যমে বিশেষ প্রচার করা হবে। মার্চের প্রথম উইকএন্ডে একই কর্মসূচি নেওয়া হবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আরও সাতটি গ্রামের জন্য। যার মধ্যে রয়েছে বীরভূমের শান্তিনিকেতন, নানুর ও জয়দেব, সুন্দরবনের পাখিরালয় ও সাতজেলিয়া। একই সময়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে পূর্ব বর্ধমানের দরিয়াপুরের ডোকরা ও আউসগ্রামের কাঁথা শিল্পীদের কথা মাথায় রেখে। আউসগ্রামের বাউল শিল্পীরাও এতে অংশগ্রহণ করবেন।

রাজ্যের এই উদ্যোগকে ‘ফোক সফর’ নামেও অভিহিত করেছেন অনেকে। এর অধীনেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের লোকশিল্পীদের নিয়ে ১৮ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি তিনদিনের মেলা হবে কলকাতার মোহরকুঞ্জে।

রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে জোয়ার আনতে বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের আগে প্রতিটি জেলাতেই চলছে সিনার্জি। প্রায় একই ধাঁচে এবার পর্যটন শিল্পকে আরও চাঙ্গা করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেই জানিয়েছেন রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক। এই উদ্যোগের মাধ্যমে অপরিচিত হলেও রাজ্যের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত জায়গাগুলিকে প্রচারে আনার চেষ্টা করছে সরকার।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে পর্যটকদের জন্য প্রশাসনকে গড়তে হবে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো। যেমন পানীয় জলের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত আলো, শৌচাগার ইত্যাদি। সেকথা ওই চিঠিতে জেলাশাসকদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন নন্দিনী চক্রবর্তী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Tourism, #West Bengal, #Village Festival

আরো দেখুন