জনপ্রিয়তার শিখরে একাধিক বাংলা মেগাসিরিয়াল, তৈরি হচ্ছে অন্য ভাষাতেও
বাংলা যা আজকে ভাবছে, সেই পদাঙ্ক অনুসরণ করছে দেশ। কোনও গল্পকথা নয়, বাস্তবেও তাই হচ্ছে। বেশ কিছু বাংলা ধারাবাহিক বিভিন্ন ভাষায় নতুন করে তৈরি হতে চলেছে। এই ঘটনা প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বাংলা ধারাবাহিক বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় তৈরি হয়েছে। তালিকায় নবতম সংযোজন ঘটিয়েছেন স্নেহাশিস চক্রবর্তী। ‘সর্বজয়া’ ওড়িয়া ভাষায় দেখানো হচ্ছে এবং ‘খুকুমণি হোম ডেলিভারি’ হিন্দিতে শ্যুটিং শুরু হয়েছে। এছাড়াও হিন্দিতে ‘যমুনা ঢাকি’ ধারাবাহিকটি ‘গীত কা ঢোলি’ নাম নিয়ে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ‘খেলাঘর’, ‘জীবনসাথী’ তামিলে রিমেক হয়েছে। ‘খোকাবাবু’ দু’টি ভাষায় হয়েছে। ‘ভজ গোবিন্দ’ হিন্দিতে হয়েছে। দীর্ঘ তালিকা বলছিলেন গল্পকার-চিত্রনাট্যকার-প্রযোজক স্নেহাশিস। এই ধারাবাহিকগুলোর গল্প এবং চিত্রনাট্য তাঁরই করা। সেই কারণে তাঁর সাহায্য নিয়েই ধারাবাহিক তৈরি হচ্ছে।
যখন গোটা দেশে বাংলার কনটেন্টকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বলিউড কিংবা দক্ষিণের ছবি ও ওয়েব সিরিজ, ঠিক সেই সময় বাংলা ধারাবাহিক তো একপ্রকার দেশের টেলিভিশনকে শাসন করছে। ‘২০১৫-’১৬ সাল থেকেই আমার বিভিন্ন ধারাবাহিক অন্যান্য ভাষায় তৈরি হচ্ছে। বাংলা ভাষার গল্প খুবই উত্কর্ষ। আমরা সাহিত্যমুখী জাতি। আজকে হয়তো সাহিত্যের জায়গায় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তবুও যা তৈরি হচ্ছে, তা কোনও অংশে কম নয়। বাংলার লেখকদের কলমের উপর ভর করে চ্যানেল কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। এটা পরিষ্কার যে, বিষয়ের দিক থেকে আমরা অনেক এগিয়ে,’ গর্বের সঙ্গে বলছিলেন স্নেহাশিস।
শুধু তাই নয়, গোটা দেশের সঙ্গে বাংলা ধারাবাহিকের টিআরপির তুলনা করলে সেদিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলা। অর্থাত্ বাংলা ধারাবাহিকের গল্প মানুষ পছন্দ করছেন। ‘দেখবেন, বাঙালি কিন্তু খুব একটা অন্য ভাষার ধারাবাহিক দেখেন না। তাঁরা হিন্দি ছবি বেশি দেখেন। ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে বিষয়টা উল্টো। সারা দেশে যখন কনটেন্ট ফুরিয়ে যাচ্ছে, তখনই ওদের চোখ পড়েছে বাংলার উপর। ওরা সাফল্যও পাচ্ছে,’ বোঝাচ্ছিলেন পরিচালক। কিন্তু এই বঙ্গেই একাংশ ধারাবাহিক বললে নাক সিঁটকোয়। তাঁদের প্রতি স্নেহাশিসের বক্তব্য, ‘যাঁরা নাক সিঁটকোন, তাঁরা বাংলা সিরিয়াল দেখেন না। কোথাও একটা ছোট্ট ক্লিপ দেখে হইহই শুরু করে দেন। এরা বরাবর ভণ্ড। বাংলার সবচেয়ে বড় গ্রোয়িং ইন্ডাস্ট্রি টেলিভিশন। সেটা তাঁরা অস্বীকার করে। কিছু ইউটিউবার এগুলো নিয়ে মশকরা করেন, অসভ্যতা করেন। কিছু লোককে অপমান করে তাঁরা দর্শক বাড়াচ্ছেন। কিন্তু মানুষ বাংলা সিরিয়াল দেখা বন্ধ করেননি। এই নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠীর জন্য বাংলা সর্বক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। সকল লেখকের হয়েই এই কথাটা বলছি।’
এ কথা অনস্বীকার্য, বাংলা ধারাবাহিকই তো বাড়ির অন্দরমহলের একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম। ‘শুধু বাড়ির লোক নয়, আমার বরণ সিরিয়ালটা তো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রয়েছে। ওটিটি তো তরুণ প্রজন্ম দেখে। এটা নিয়ে যাঁরা মশকরা করেন, তাঁদের দেখে আমার করুণা হয়,’ শ্লেষের সুরে কথাটা বলে ফোন রাখলেন স্নেহাশিস।