চলচ্চিত্রে কাকাবাবু
বাংলার চলচ্চিত্র নির্মাতারা চলচ্চিত্রের কাহিনীর জন্যে বারবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকে ব্যবহার করেছেন। সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে গৌতম ঘোষ সকলেই; সুনীল-কাহিনী নিয়ে ছবি করেছেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কাকাবাবু সিরিজের নিয়েগুলো নিয়েই সবচেয়ে বেশি ছবি নির্মাণ হয়েছে। বিগত শতকের সত্তরের দশকে আনন্দমেলার পাতায় কাকাবাবু, রাজা রায় চৌধুরী এবং তাঁর ভাইপো সন্তুর আত্মপ্রকাশ। বিংশ শতকের বাংলায় প্রত্যেক সাহিত্যিকই নিজেদের গোয়েন্দা চরিত্রকে সৃষ্টি করে গিয়েছেন। তবে সুনীলের কাকাবাবু নিছক গোয়েন্দা কাহিনী নয়। কাকাবাবু রহস্যরোমাঞ্চপ্রেমী, রহস্যের কিনারা করাই কাকাবাবুর কাজ। কাকাবাবুর গপ্পো নিয়ে বাংলায় অন্ততঃ ডজন খানেক ছবি হয়েছে। প্রত্যেক ছবিতেই আলাদা আলাদা অভিনেতারা কাকাবাবুর ভূমিকায় অবিতীর্ন হয়েছেন।
বাংলার একাধিক অভিনেতা কাকাবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। রিলের কাকাবাবুদের খুঁজলো দৃষ্টিভঙ্গি :
১) সমিত ভঞ্জ :
কাকাবাবুর গল্প নিয়ে প্রথম ছবি করেন তপন সিংহ। সবুজ দ্বীপের রাজা গল্পে রাজা রায় চৌধুরী হয়েছিলেন সমিত ভঞ্জ। রহস্যময় আগুনের কিনারা করতে আন্দামানে পাড়ি দেন কাকাবাবু ও সন্তু। সেখানেই শায়েস্তা করেন জাদরেল দস্যু পাঞ্জাকে।
জারোয়াদের দ্বীপে প্রখ্যাত স্বাধীনতাসংগ্রামী গুণদারঞ্জন তালুকদারের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়, গল্পে তিনিই সবুজ দ্বীপের রাজা। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে।
২) সুমন্ত মুখোপাধ্যায় :
কাকাবাবুর অভিযানের কাহিনীগুলোকে নিয়ে টেলিছবিও হয়েছে। আকাশ বাংলার প্রযোজনায় কাকাবাবু সিরিজের টেলিফিল্মে কাকাবাবুর ভূমিকায় অভিনয় করেন সুমন্ত মুখোপাধ্যায়।
৩) অর্জুন চক্রবর্তী :
২০০১ সালে কাকাবাবু ও এক ছদ্মবেশী গল্প নিয়ে টেলি ছবি প্রযোজনা করে ইটিভি বাংলা। পরিচালনা করেন জয় মুখোপাধ্যায়। বাংলার দর্শকেরা কাকাবাবুর চরিত্রে সেবার অর্জুন চক্রবর্তীকে পেয়েছিলেন।
৪) সুদীপ মুখার্জী :
সুদীপ মুখার্জীও টেলিভিশন সিরিজের কাকাবাবু। ২০০৯ নাগাদ ডিডি বাংলা কাকাবাবুর কাহিনী নিয়ে টেলিভিশন সিরিজ তৈরি করে। পরিচালক সুব্রত দাসের লেন্সের ওপারে কাকাবাবু হন সুদীপ মুখোপাধ্যায়। ঐ সিরিজে সন্তু হয়েছিলেন সাহেব ভট্টাচার্য।
৫) সব্যসাচী চক্রবর্তী :
আমাদের ফেলুদাও ডিডি বাংলার জন্য কাকাবাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। দুটি গল্পে রাজা রায় চৌধুরীর ভূমিকায় সব্যসাচী চক্রবর্তীকে দেখা গিয়েছে। ছবি দুটি হল কাকাবাবুর হেরে গেলেন এবং এক টুকরো চাঁদ। কাকাবাবু হেরে গেলেন ছবি খলনায়কের চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করেন। নবাব সিরাজুদ্দৌলার দেওয়া চুনির মালা নিয়ে রহস্য শুরু হলেও গুটেনবার্গের বাইবেলে এসে রহস্যের সমাধান হয়। দ্বিতীয় ছবিটি চাঁদের পাথর চুরি নিয়ে শুরু। মুরুন্ডির রাষ্ট্রদূত সাইমনের কান্ডকারখানা নিয়ে তৈরি এই ছবিটিতে জোজোর আজগুবি মিথ্যেগুল গপ্পো দর্শকদের কমিক রিফিল দিয়েছে। মেজর ঠাকুর সিং চরিত্রে মৃনাল মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় অনবদ্য, ছবির শেষে চুরি যাওয়া চাঁদের পাথরটিও উদ্ধার করেন কাকাবাবু। এই ছবিতে সন্তুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সোহম চক্রবর্তী।
৬) প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় :
টলিউড ইনডাস্ট্রি আর তিনি সমর্থক। ২০১৩ সালের দুর্গাপুজোয় মিশর রহস্য ছবি দিয়েই প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাকাবাবুর চরিত্রে যাত্রা শুরু হয় । তারপর পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক গল্প নিয়ে বানানো ইয়েতি অভিযান ছবিতেও তিনিই রিলের কাকাবাবু হন। দুটোর পরিচলকই সৃজিত মুখোপাধ্যায়। আজ মুক্তি পাচ্ছে তাদের তৃতীয় ছবি কাকাবাবুর প্রত্যাবর্তন। যদিও এ ছবির শ্যুটিং হয়েছে অনেকদিন আগে, অতিমারির কারণে ছবিমুক্তি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অ্যাভেঞ্চারপ্রেমী দর্শকদের রসনাতৃপ্তি দিতে মাঘের শেষে আজ শুক্রবারের পর্দায় আসছেন কাকাবাবু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, তাপস পালও কাকাবাবুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, পাহাড় চূড়ায় আতঙ্ক গল্প নিয়ে সেই ছবি তৈরি হয়েছিল। পরিচালনা করেছিলেন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিশা ফিল্মস প্রযোজিত ছবিটি কোন এক আজ্ঞাত কারণে মুক্তি পায়নি।