দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কোটির লোকসান মাদুর শিল্পে

June 8, 2020 | 2 min read

লকডাউন পরিস্থিতিতে সংকটে মাদুর শিল্পের আঁতুড়ঘর। সবংয়ের অর্থনীতি বেঁচে রয়েছে মাদুর শিল্পের উপরে। প্রতি মাসে গড়ে ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয় মাদুর থেকে। লকডাউন এবং করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রায় আড়াই মাস সবাই গৃহবন্দি। বাইরে কোথাও মাদুর বিক্রি করতে যেতে পারছেন না কেউ-ই। দোকানবাজার খুললেও মাদুরের বাজার এখনও খোলেনি। ফলে গভীর সঙ্কটের মুখে পড়েছে এই শিল্প।

সবংয়ের ভূমিপুত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থা মাদুর শিল্পের। মাদুরের বাজার খোলেনি। এখানকার বিধায়ক এবং আমি, বিডিও, জেলাশাসক ও রাজ্য সরকারের সচিবের কাছে আবেদন করেছি মাদুর শিল্পীদের নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য।’ তিনি বলেন, ‘মাদুরের উপর সবংয়ের অর্থনীতি নির্ভর করে। তাই মাদুরের বাজার বন্ধ থাকলে খুবই সমস্যা।’

কোটির লোকসান মাদুর শিল্পে

সবংয়ের মাদুর শিল্পী অখিল জানা বলেন, ‘লকডাউন পরিস্থিতিতে মাদুর শিল্পের অবস্থা খুবই খারাপ। কবে যে বাজার স্বাভাবিক হবে, জানি না। প্রত্যেকের বাড়িতে প্রচুর পরিমাণ মাদুর তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে। কোথায়, কবে বিক্রি হবে তাও জানা নেই আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ৮৫ জন কারিগর কাজ করতেন। এখন আর তাঁদের কাজ দিতে পারছি না। প্রচুর মাদুর ও মাদুরের সামগ্রী ঘরে মজুত হয়ে পড়ে রয়েছে। বিক্রির কোনও ব্যবস্থা নেই।’ একই কথা শিল্পী অশোক জানা, প্রমীলা মান্নাদের। তাঁরা বলেন, ‘মাদুর শিল্পীদের জন্য সরকারের কোন ভাবনা নেই।’ শিল্পী কিঙ্কর দাস বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষের ক্ষতি হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেন চাষিদের। উম্পুন ঝড়ে মাদুর কাঠি চাষেরও কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তার জন্য যে সরকরি সাহায্যের দরকার, সেই কথাটা আজও আমরা বোঝাতে পারিনি জনপ্রতিনিধিদের।’

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এই ব্লকে ২ লক্ষ ৯২ হাজার জনসংখ্যার মধ্যে ১ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষ মাদুর শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। শুধু এ রাজ্য নয়, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সবংয়ের মাদুরের কদর রয়েছে। সবংয়ে তৈরি এক একটি মাদুরের দাম ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০ হাজার টাকা। এখানকার মাদুরের বৈচিত্র হল, নিপুণ শিল্পকর্মের মাধ্যমে মাদুরের উপর গান্ধীজি, স্বচ্ছ ভারত, বাংলার লোকশিল্প-সহ নানান চিত্র ফুটিয়ে তুলতে পারেন শিল্পীরা। এর আগে মাদুরের উপর দুর্গামূর্তি ফুটিয়ে তুলে তা দেড় লক্ষ টাকায় বিক্রি করেছিলেন এক শিল্পী। সারতা গ্রামের পুষ্পরানি জানা ১৯৮০ সালে মাদুর শিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও পেয়েছেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটির ধাক্কায় সঙ্কটের মুখে পড়ার পর ধীরে ধীরে ব্যবসা সবে দাঁড়াতে শুরু করেছিল সবংয়ে। কিন্তু লকডাউন ও উম্পুনের জোড়া ধাক্কায় তাঁদের কোমর ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা। সবং ব্লকে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে মাদুর কাঠি চাষ হয়। আর সেই কাঠি দিয়ে মাদুর, মতরঞ্জি, মাদুরজাত বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। মাদুর শিল্পীদের কথায়, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমার সঙ্গে সঙ্গে মাদুরের কদর বাড়তে শুরু করেছিল সারা দেশে। এরই মধ্যে করোনার থাবা অন্য ক্ষুদ্রশিল্পের সঙ্গে সঙ্কটের মুখে ফেলেছে মাদুর শিল্পকেও।

পুরুষরা মাদুরকাঠি চাষ করেন। বাড়ির কাজ সামলে মূলত মহিলারাই মাদুর তৈরি করেন। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মাদুর বিক্রি করেন ঠিকাকর্মী বা বাড়ির পুরুষরা। সারা দেশে ঊৎপাদিত মাদুরের ৫৫ শতাংশ তৈরি হয় সবংয়ে। ফের ব্যবসা শুরু না-হলে এলাকার অর্থনীতি যে ধাক্কা খাবে, স্বীকার করেছেন এলাকার সাংসদও।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#covid-19, #bengal mat industry

আরো দেখুন