জলময়ূর, মোহনচূড়া ফিরছে দিনহাটা শহরে
টানা দুমাসের বেশি লকডাউনে কোচবিহার জেলার বিভিন্ন শহরে বায়ুদূষণ যে অনেকটা কমেছে, তা স্বীকার করেছেন পরিবেশপ্রেমীরা। খুশির খবর হল, আগে যে সমস্ত পাখি শহরে খুব একটা দেখা যেত না, সেসব পাখিও ধীরে ধীরে শহরে দেখা দিতে শুরু করেছে। দিনহাটা শহরেও এখন ফিরে এসেছে জলময়ূর, মোহনচূড়ার মতো পাখি। শহর থেকে বিভিন্ন ধরনের পাখি হারিয়ে যাওয়া একসময় পরিবেশপ্রেমী ও প্রবীণ মানুষের মন খারাপের কারণ ছিল। শহরাঞ্চলে দূষণ বেড়ে যাওয়ার ফলেই এই পাখিরা বিদায় নিয়েছিল বলে পরিবেশপ্রেমীরা জানান। দিনহাটার প্রবীণ বাসিন্দা সুনীল দে বলেন, একসময় সারাদিন বাড়ির উঠোনেই শালিক, বুলবুল, পায়রার মতো পরিচিত পাখিদের দেখা মিলত। কিন্তু গত কয়েকবছরে তাদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। তেমনি শীতের শুরুতে পাড়ায় পাড়ায় বেনেবউয়ের ডাক শোনা যায়নি।
তবে গত দুই মাসে লকডাউন থাকায় রাস্তায় যানবাহন কম ছিল। এখন ধীরে ধীরে যান চলাচল বাড়লেও আগের তুলনায় কম। ফলে জেলাজুড়ে বায়ু ও শব্দদূষণ কমেছে। দূষণমুক্ত পরিবেশে ফের দেখা মিলছে বিভিন্ন ধরনের পাখির। দিনহাটার বাসিন্দা পাখিপ্রেমী শোভন দেব বলেন, শহরের বিভিন্ন দিঘিও এখন অনেকটাই স্বচ্ছ। সেজন্য দিঘির কাছে এখন জলময়ূর পাখির দেখা মিলছে। শহরের একটু বাইরের দিকেই বাঁশপাতি, মোহনচূড়ার মতো পাখি দেখা যাচ্ছে। এই সমস্ত পাখি শান্ত, নির্জন পরিবেশ পছন্দ করে। সেকারণেই এখন ফের এদের দেখা মিলছে। ফোটোগ্রাফার প্রশান্ত ভট্টাচার্য বলেন, গাড়িঘোড়া অনেকটাই কম চলছে। যার ফলে শব্দদূষণ অনেকটাই কমেছে। ফলে আমরা আমাদের চারপাশে পরিচিত পাখিদের দেখতে পাচ্ছি। তবে জনজীবন স্বাভাবিক হলে ফের দূষণ বাড়বে। সেজন্য দূষণ কমাতে সরকারের বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যবস্থা করা দরকার।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের কোচবিহার জেলা কাউন্সিলের সদস্য জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, উত্তরবঙ্গ বরাবরই জীববৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র। এখানকার শান্ত গ্রামে অথবা কম বসতিপূর্ণ শহরে কয়েক বছর আগেও বুলবুলি, মৌটুসি, ফটিকজল, বসন্ত বৌরির মতো পাখিদের দেখা মিলত। কিন্তু পরিবেশ দূষণের কারণে এদের অনেকেই আজ হারিয়ে গিয়েছে। লকডাউনের ফলে ফের সেই সমস্ত পাখির কলরব শোনা যাচ্ছে। এটা চিরস্থায়ী করতে হলে দূষণ রোধে এখনই আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।