দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রাক্তন স্ত্রী ও শাশুড়ির অস্বাভাবিক মৃত্যু

June 8, 2020 | 3 min read

শনিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অধীন বিধাননগর উত্তর থানার অফিসারেরা বি ব্লকের একটি দোতলা বাড়ির একটি ঘর থেকে দুই মহিলার দেহ উদ্ধার করেন। দুই মহিলা হলেন পাপিয়া দে (৭৬) ও শর্মিষ্ঠা দে (৬০)। তাঁদেরকে সঙ্গে সঙ্গে বিধাননগর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে দু’জনকেই মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর তাঁদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য় পাঠিয়ে দেওয়া হয় আরজিকর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তদন্ত সূত্রে পুলিশ জানতে পারে যে, ওই মৃত দুই মহিলা হলেন যথাক্রমে রাজ্যের বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থের প্রাক্তন শাশুড়ি ও স্ত্রী। আরও জানা গিয়েছে যে, সুরজিৎবাবুর প্রাক্তন শ্বশুর ছিলেন যুগান্তর পত্রিকার একজন সাংবাদিক। তাঁদের দুই মেয়ের মধ্যে বড় জন হলেন শর্মিষ্ঠা দে। শর্মিষ্ঠা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল সুরজিৎবাবুর। তাঁদের ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তবে কিছুদিন আগে তিনি মারা যান। সুরজিৎবাবু শ্বশুর পরিতোষ দে কিছুদিন আগে মারা যান। তার মৃত্যুর পর থেকে পাপিয়া দেবীর সঙ্গে ওই বাড়িতেই থাকতেন শর্মিষ্ঠা দেবী।

ইতিপূর্বে রাজ্য পুলিশের আইজি আইন-শৃঙ্খলা পদে থাকার সময় সুরজিৎবাবুর সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা শুরু হয়। তাঁদের একটি মেয়ে রয়েছে, যার বয়স বর্তমানে ১৫ বছর। মেয়ে তার বাবার সঙ্গে থাকে এবং কলকাতার একটি নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে।

অপরদিকে শর্মিষ্ঠা দেবী একসময় দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বসু রোডে অবস্থিত সেন্ট জন ডায়োসেসান নামে একটি নামি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। পরে তিনি উত্তর কলকাতার সর্বমঙ্গলা ঘাটের কাছে একটি গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হন। কোনও অজ্ঞাত কারণে সেখান থেকে তার চাকরি চলে যায়। সুরজিৎবাবুর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলার সময় থেকেই শর্মিষ্ঠাদেবী বিধাননগরে তাঁর বাবার বাড়িতেই থাকতে শুরু করেন। দুজনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের কেউই আর পুনরায় বিবাহ করেননি।

কিছুদিন যাবত পাপিয়া দেবী ও তাঁর মেয়ের শর্মিষ্ঠা দে উভয়েই সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। তাঁদের দুজনকে পরিচারকেরা দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ৩ দিন আগে নিয়ে গিয়েছিলেন বিধাননগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির জন্য।

রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টার প্রাক্তন স্ত্রী ও শাশুড়ির অস্বাভাবিক মৃত্যু

স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাঁদের ভর্তি নেওয়ার জন্য ৮০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু শর্মিষ্ঠা দেবীর পক্ষে সেই টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় তাঁরা বাড়িতে ফিরে আসেন। ওই হাসপাতালেই তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, তাঁরা করোনা আক্রান্ত। প্রতিবেশীদের কারুর শরীরে যাতে সংক্রমণ না ঘটে সেজন্য় তাঁরা দরজা-জানলা বন্ধ করেই বাড়িতে থাকছিলেন। শুক্রবার দুপুর থেকে তাঁদের কোনও সাড়া শব্দ না পাওয়া যাওয়ায় প্রতিবেশীরাই থানায় খবর দেন।

পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পায়, বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তারা দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখতে পায়, পাপিয়াদেবী ও তার মেয়ে শর্মিষ্ঠা ঘরের ভেতর শুয়ে রয়েছেন। শর্মিষ্ঠা দেবীর মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। ঘটনাস্থলে পাপিয়াদেবীকে পরীক্ষা করে তারা বুঝে যান যে তাঁদের প্রাণ নেই। তবে শর্মিষ্ঠাদেবীকে দেখে তাঁরা ঠিকমতো বুঝে উঠতে না পেরে তড়িঘড়ি তাঁদের দু’জনকেই হাসপাতালে নিয়ে যান।

বিধাননগর পুরসভার পক্ষ থেকে এদিন সকালে পুরো বাড়িটিকে জীবানুমুক্ত করা হয়। স্থানীয়দের ধারণা, মা-মেয়ে দুজনেই করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। তবে পুলিশের একাংশের ধারণা মায়ের মৃত্যু হয়েছে জেনেই শর্মিষ্ঠা দেবী আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন। তবে সবটাই জানা যাবে ওই দুজনের দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ,শর্মিষ্ঠা দেবীর চাকরিটি যেহেতু কোন অজ্ঞাত কারণে চলে গিয়েছিল। তাই তিনি পেনশন পেতেন না। অপরদিকে তাঁদের এই বাড়িটির একতলাটি একসময় মোটা টাকায় ভাড়া দেওয়া হলেও ভাড়াটের সঙ্গে কিছু গন্ডগোলের দরুন বেশ কিছুদিন যাবত তাঁরা ভাড়াও পাচ্ছিলেন না। ফলে কিছুদিন যাবত এই পরিবারটি আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছিল। সমগ্র ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সুরজিৎ করপুরকায়স্থের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা শুরু হওয়ার পর শর্মিষ্ঠা দেবী বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে বিজেপিতে নিয়ে গিয়েছিলেন রাজ্যের এক প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেলের আইনজীবী মেয়ে। যিনি নিজেও বিজেপিতে ছিলেন। পরবর্তী পর্যায়ে বিজেপি শর্মিষ্ঠা দেবীর উপর তাঁদের ভরসা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাঁকে আর বিজেপির কোন অনুষ্ঠানে দেখা যেত না। গতকাল শর্মিষ্ঠা দেবী ও তার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে ছুটে গিয়েছিলেন রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও আরও অনেকে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কোনও নিরপেক্ষ এজেন্সিকে দিযে এই মৃত্যু রহস্যের তদন্তের দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, শর্মিষ্ঠাদেবী বিজেপির সদস্য ছিলেন। তিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাঁর ও তাঁর মায়ের মৃত্যু সবার কাছেই একটা রহস্য। পুলিশ নয়, কোনও নিরপেক্ষ এজেন্সিকে দিয়ে মৃত্যুর তদন্ত করালে তবেই আসল রহস্য প্রকাশ পাবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#mystery, #police mans

আরো দেখুন