গত ৩ বছরে বেকারত্ব, ঋণের জ্বালায় মোদীর ভারতে আত্মঘাতী ২৫ হাজার মানুষ!
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সংসদে দাবি করেছেন, দেশে বেকারত্ব নেই। সবটাই নাকি বিরোধীদের অপপ্রচার। প্রচুর কর্মসংস্থান হচ্ছে। চমকে দেওয়ার মতো বিষয় হল, বুধবার সেই দাবি নস্যাৎ করল স্বয়ং অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই সংসদে দাঁড়িয়েই। তথ্য দিয়ে তারা জানিয়ে দিল, ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল—এই তিন বছরে বেকারত্ব এবং ঋণের জ্বালায় মোদীর ‘নতুন ভারতে’ আত্মঘাতী হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। এদেশে ২৫ বছর ধরে আত্মহত্যার সংখ্যায় শীর্ষে কৃষকরা। তালিকায় রয়েছে মহারাষ্ট্র থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ। কিন্তু এদিনের সরকারি পরিসংখ্যান দেখিয়ে দিল, বাড়তে থাকা আত্মহত্যার প্রবণতার তালিকায় কৃষকদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাজ না পাওয়া, অথবা জীবিকা হারানো হাজার মানুষ।
বুধবার রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়েছেন, ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ওই সময়সীমায় ১৬ হাজারের বেশি ভারতবাসী আত্মহত্যা করেছেন ঋণের দায়ে দেউলিয়া হয়ে। আর ৯ হাজারের বেশি নাগরিক আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বেকারত্বের জ্বালায়।’ বিরোধীরাই বেকারত্বের ইস্যুতে যুবসমাজকে অযথা বিভ্রান্ত করছে—এই ছিল দিনকয়েক আগে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ। অথচ তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই সংসদেই জানাচ্ছে, ২০২০ সালে কর্মহীনতার জন্য আত্মহত্যার ঘটনা দেশে সর্বাধিক। শুধু ওই এক বছরেই জীবিকা সঙ্কটে আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫৪৮। মোদি সরকারের কাছে সবথেকে অস্বস্তিকর তথ্য হল, এই সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। ২০১৮ সালে বেকারত্বের যন্ত্রণায় আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭৪১। ২০১৯ সালে এই পরিসংখ্যানই ছিল ২ হাজার ৮৫১।
বিপজ্জনক বার্তাটি হল, করোনার সংক্রমণ ও লকডাউনের জেরে জীবিকা হারানোর হাহাকার কিন্তু এই সময়সীমায় ছিল না। করোনাকালের আগে অর্থনীতি স্বাভাবিক থাকাকালীনই এই মর্মান্তিক চিত্র দেখা গিয়েছিল। এই তথ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরাহার কথাও শুনিয়েছেন। কী সেই সুরাহা? তিনি বলেছেন, ‘এই সমস্যাগুলির কারণেই ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে আত্মহত্যা প্রতিরোধের লক্ষ্যে। এছাড়া আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনাও রয়েছে।’
সরকার এই দাবি করলেও বাস্তব কিন্তু ভিন্ন। নীতি আয়োগ গত বছরই জানিয়েছিল, ৪৫ বছরের মধ্যে রেকর্ড ছুঁয়েছে বেকারত্ব। আর এই ইস্যুতেই অধিবেশনের প্রথম দিন থেকে লাগাতার সরকারকে আক্রমণ করে আসছে বিরোধীরা। সব অভিযোগ খণ্ডন করেছিলেন মোদী। এরপর তাঁর সরকারের মন্ত্রকই যে বেদনাদায়ক চিত্র তুলে এনেছে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিরোধীরাও। রাজ্যসভার তৃণমূল এমপি জহর সরকার বলেন, ‘এই যে রেলের চাকরির জন্য বিহারে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছে, এটা থেকে কী প্রমাণ হয়? এটা আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা নয়। অন্তরের ক্ষোভ। কাজ না পাওয়ার। এভাবেই বিস্ফোরক হয়ে উঠছে যুবসমাজের ক্রোধ। বিরোধীদের আক্রমণ করলেই বেকারত্বের জ্বালা ঢাকা দেওয়া যাবে না।’ দেশবাসী স্রেফ কাজের অভাবে কিংবা দেনার দায়ে নিজেদের প্রাণ কেড়ে নিলেন, এটা কোন ভারতের চিত্র তুলে ধরছে গোটা বিশ্বে? মোদীর স্বপ্নের অমৃতকাল একেই বলে? প্রশ্ন বিরোধীদের।