খুব অল্প সময়েই পিপিই হবে জীবাণুমুক্ত
লকডাউনে কমেছে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণও। কিন্তু এই আবহেও চিকিৎসাবর্জ্যের দূষণ চলেছে সমানে। সারা বছরের মতো লকডাউনের সময়েও দেখা গিয়েছে, যে কোনও হাসপাতালের (বিশেষত সরকারি) চিকিৎসাবর্জ্যের ভ্যাট উপচে পড়ছে। তবে করোনার দৌলতে সেই ভ্যাটে এখন সিরিঞ্জ-স্লাইড-গ্লাভস কিংবা রক্তমাখা তুলো-গজ বা কেটে বাদ যাওয়া প্রত্যঙ্গের তুলনায় অনেক বেশি জায়গা দখল করছে পিপিই! এই বিপুল বর্জ্যে রাশ টানতে পিপিই-কে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে ‘মোবাইল ডিজইনফেকট্যান্ট চেম্বার’ তৈরির উদ্যোগ। কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা সংস্থা আইসিএমআর-ও যুক্ত এই প্রকল্পে।
কী এই প্রকল্পের লক্ষ্য? পিপিই একবার ব্যবহারের পরেই যাতে ফেলে না-দিতে হয়। যাতে বেশ কয়েক বার জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করা হয়। এক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘মাস চারেক আগে পিপিই সম্পর্কে আমজনতার তেমন ধারণা ছিল না। সারা বছরে দেশে মাত্র ৪৭ হাজার পিপিই তৈরি হত। আর এখন দৈনিক ৪.৫০ লক্ষ পিপিই উৎপাদন হচ্ছে। তাও এঁটে ওঠা যাচ্ছে না চাহিদার সঙ্গে। আমাদের হিসেব বলছে, দেশের সব বড় শহর মিলিয়ে রোজ প্রায় পাঁচ লক্ষ পিপিই ব্যবহৃত হচ্ছে।’
বাংলাও ব্যতিক্রম নয়। গত তিন মাসে রাজ্যের ৪৮টি সরকারি হাসপাতালে শুধুমাত্র সরকারি তরফেই ৭.৫০ লক্ষ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে আইডি-কে প্রায় ৩৩ হাজার, মেডিক্যালকে প্রায় ৪৩ হাজার এবং এসএসকেএম-কে প্রায় ৪৫ হাজার পিপিই দিয়েছে স্বাস্থ্যভবন। এই তিনটি হাসপাতালে দৈনিক গড়ে যথাক্রমে ১২০, ২৭০ ও ৩৫০টি করে পিপিই ব্যবহৃত হচ্ছে। শুধু কোভিড ওয়ার্ডের চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরাই নন, রোজ পিপিই পরে কাজ করতে হয় প্যাথলজি ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশ কিছু অচিকিৎসক কর্মী, হাসপাতালের ক্যান্টিন-বয় ও সাফাইকর্মীদেরও।
দেশজোড়া এমন বিপুল পিপিই ব্যবহারের জেরে নতুন এই চিকিৎসা-বর্জ্যের পরিমাণে প্রমাদ গুনছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। স্বাস্থ্যকর্তাদেরও চিন্তা, প্রতি দিন এই বিপুল সংখ্যক পিপিই ছ’ থেকে আট ঘণ্টা ব্যবহারের পরই ফেলে দেওয়া হয় বলে বর্জ্যের স্তূপ তৈরি হচ্ছে। পিপিই জীবাণুমুক্ত করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারলে সাশ্রয় যেমন হবে, তেমনই কমবে বর্জ্যের পাহাড়ও।
তাই আইসিএমআরের শাখা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অকুপেশনাল হেলথ (এনআইওএইচ) মোবাইল ডিজইনফেকট্যান্ট চেম্বার নামে যন্ত্র তৈরিতে হাত দিয়েছে। আমেদাবাদের এই সংস্থার অধিকর্তা কমলেশ সরকার বলেন, ‘ভাবনগরের আর এক কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল সল্ট অ্যান্ড মেরিন কেমিক্যালস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই ছোটখাটো ডিজইনফেকট্যান্ট চেম্বারটা ডিজাইন করছি। এর নীলনকশা এমনই যাতে ভ্রাম্যমাণ হয়, এক কেন্দ্র থেকে অন্য কেন্দ্রে ঘুরতে পারে।’
এনআইওএইচের অধিকর্তা জানান, প্রথমে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইট, তার পর হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড এবং সবশেষে অতিবেগুনি রশ্মি— ত্রিস্তরীয় প্রক্রিয়ায় খুব অল্প সময়েই যাতে ১০-১৫টি পিপিই একসঙ্গে জীবাণুমুক্ত করা যায়, সে ভাবেই তৈরি করা হচ্ছে এই যন্ত্র। এতে জীবাণুমুক্ত করা যাবে গ্লাভস, মাস্ক, ফেস-শিল্ডও। দিল্লির নির্মাণভবন সূত্রের খবর, এনআইওএইচ কয়েক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে এই ধরনের যন্ত্র তৈরির প্রয়োজন সম্প র্কে বিস্তারিত জানায়। বিষয়টিতে আগ্রহ দেখায় কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)। তাই যন্ত্রটি ভাবনগরের সিএসআইআর-এর অধীন সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবেই বানাচ্ছে এনআইওএইচ।