শনিবার খুলছে দক্ষিণেশ্বর মন্দির
প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ থাকার পর শনিবার, ১৩ জুন থেকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে যাচ্ছে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের দরজা। তবে মন্দির খুললেও ১৬৫ বছরের দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের ইতিহাসে এই প্রথম ফুল ছাড়া পুজো দিতে হবে ভক্তদের। ভক্তরা যে ডালা দিয়ে পুজো দেবেন সেই ডালায় মিষ্টি প্রসাদ ছাড়া আর কোনও কিছুই আনার অনুমতি দেওয়া হবে না। এমনকি শাঁখা-পলা থেকে শুরু করে আলতা সিঁদুর কোনও কিছুই এখন আনতে পারবেন না ভক্তরা।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানান দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরী। পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তাদের উপস্থিতিতে কী ভাবে দর্শনার্থীদের মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ ও বের করানো হবে, বুধবার তার ট্রায়াল রান হয়। লকডাউন চালুর আগে সাধারণ ভাবে রোজ মন্দিরে ভক্তদের লম্বা লাইন পড়ত। লকডাউনের সময় সরকারি নির্দেশ মেনে অন্য ধর্মীয় স্থানের মতো দক্ষিণেশ্বর মন্দিরও বন্ধ ছিল দর্শনার্থীদের জন্য। তবে নিত্যপুজো চালু ছিল। আনলক ১-এর দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশেষে করোনার সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনে শনিবার থেকে মন্দির খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে খুশি ভক্তরা।
তবে অন্য নিয়মে বদলের পাশাপাশি মন্দিরের পুজো দেওয়ার সময়ও কমিয়ে আনা হয়েছে। সকাল ৭টা থেকে ১০টা এবং বিকেলে সাড়ে ৩টে থেকে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকবে। দু’বেলাই মন্দিরের দরজা খোলার ২০ মিনিট আগে সিংহদুয়ার খুলে দেওয়া হবে এবং বন্ধ হওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে সিংহদুয়ার বন্ধ হয়ে যাবে। মন্দির কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, স্কাইওয়াকে দুটি প্রবেশ ও প্রস্থানের জায়গা থাকবে। স্কাইওয়াকে উঠলেই ভক্তদের প্রথমে থার্মাল স্ক্রিনিং হবে। কারও শরীরের তাপমাত্রা যদি ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশী হয় তা হলে তাকে মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এর পর সিংহদুয়ার দিয়ে ঢুকে আর একবার শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে।
তার পর স্যানিটাইজেশন টানেলের মধ্যে জীবাণুমুক্ত হওয়ার মন্দিরের মূল দরজা দিয়ে ভক্তদের ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে। যদিও একসাথে ১০ জনের বেশি মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। একজনের থেকে আর একজনের দূরত্ব রাখতে হবে ৮ ফুট। সেই জায়গাও মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফে ছবি এঁকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
মন্দিরের সেবায়েতদের পিপিই কিট পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গর্ভগৃহের বাইরে নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকেই ভক্তরা পুজো দেবেন। মন্দিরে থাকা শিবমন্দিরগুলি বন্ধ থাকবে। রামকৃষ্ণদেবের শয়নকক্ষ, সারদা মায়ের ঘরও বন্ধ থাকবে। মন্দির সংলগ্ন পঞ্চবটি তলা, গঙ্গার পাড়ে কাউকেই পুজোর পরে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। মন্দির কর্তৃপক্ষ আরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মন্দির চত্বরে এবং স্কাইওয়াকে যেসব ডালার দোকান রয়েছে সেগুলি পর্যায়ক্রমে জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় খোলা হবে। এ ছাড়া মন্দির লাগোয়া যেসব মিষ্টি ও কচুরির দোকান আছে সেখানে বসে খাওয়া বন্ধ রাখতে বলে হয়েছে। তবে পার্সেল ব্যবস্থা চালু থাকবে। মন্দিরে ভিআইপি পুজো ব্যবস্থাও বন্ধ থাকছে।
কুশল চৌধুরী বলেন, ‘ভক্তদের কথা ভেবে ঝুঁকির সাথে আমরা মন্দির খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সমস্ত রকম সুরক্ষাবিধি মেনে ভক্তদের ঢোকানো হবে’। এ দিনের ট্রায়াল রান পর্বে হাজির ছিলেন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা। তিনি বলেন, ‘মন্দিরে পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন রাখা হচ্ছে। ভক্তরা যাতে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে মন্দিরে প্রবেশ করেন সেদিকে পুলিশ নজর রাখবে’। কামারহাটির বিদায়ী পুরপ্রধান তথা পুর প্রশাসক গোপাল সাহা বলেন, ‘মন্দির কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সিদ্ধান্ত মেনেই পুরসভা কাজ করবে’।
অন্য দিকে বুধবারই বিকেলে বেলুড়মঠে এসে পৌঁছন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। তাঁরা তিনটি গাড়িতে এসেছিলেন। গাড়িগুলো সোজা মঠ অফিসের দিকে চলে যায়। মনে করা হচ্ছে বিধি মেনে আগামী ১৫ জুনের পর বেলুড় মঠ ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত করা হলে কী ভাবে মন্দির দর্শন ও মঠে প্রবেশ ও বের হওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা প্রত্যক্ষ করতেই এ দিন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের মঠে আগমন। আধঘণ্টা পর ফাঁকা গাড়ি মঠ থেকে বেরিয়ে যায়। জানা যায়, মঠ দেখে লঞ্চে দক্ষিণেশ্বরের দিকে যাত্রা করেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।