পুলিশের থেকে পালতে গিয়ে পাইপ ফস্কে পড়ে মৃত্যু আনিসের, তদন্তে ইঙ্গিত সিটের
ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যুর তদন্ত-জাল প্রায় গুটিয়ে এনেছে সিট। ঘটনার দিন, অর্থাৎ গত শুক্রবার রাতে আনিসের বাড়ির ছাদে উঠেছিলেন যে দু’জন, আমতা থানার সেই হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্রাচার্যকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিটের সুপারিশে হোমগার্ডকে মঙ্গলবারই ‘নিষ্ক্রিয়’ করা হয়েছিল। খোঁজ চলছিল সিভিকের। সিট সূত্রে জানা গিয়েছে, আমতার ওই বাড়িতে অন্য যে পুলিসকর্মী ও সিভিকরা গিয়েছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। সিটের তদন্তে ইঙ্গিত, ওই পুলিসকর্মী ও সিভিকরা ছাদে ওঠার পর পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান আনিস। সেই পর্বে রেইন পাইপ ধরে নীচে নামতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যান আনিস। এরপরও তাঁকে তুলে হাসপাতালে কেন নিয়ে যাওয়া হল না, সেই ইস্যুতে জেরা করা হচ্ছে ধৃতদের। ঘটনা নিয়ে সরকার যে কড়া অবস্থান নিয়েছে, তা নবান্নে এদিন জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিট সূত্রের খবর, সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি একটি আপত্তিকর পোস্ট করেছিলেন আনিস। সেই পোস্ট কেন এবং কী জন্য করা হয়েছে, শুক্রবারই তার খোঁজখবর করতে বলা হয় আমতা থানাকে। দুই কর্তার থেকে বিষয়টি খতিয়ে নির্দেশ পেয়ে থানার ওসি ফোন করেন টহলদারিতে থাকা আরটি ভ্যানের কর্তব্যরত অফিসারকে। গাড়িতে ছিলেন এক এএসআই। ছিলেন হোমগার্ড এবং কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার। জেরায় ফোন আসার বিষয়টি সিট কর্তাদের জানিয়েছেন ধৃত হোমগার্ড ও সিভিক। ধৃতদের দাবি, আনিসের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে থানায় তুলে আনার নির্দেশ এসেছিল ওই টেলিফোনে। সিট সূত্রে খবর, কোনওরকম নোটিস ছাড়া কীভাবে তাঁরা ওই রাতে আনিসের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি ধৃতরা। বরং সত্য চেপে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি, পুলিসকর্মী, হোমগার্ড ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের বিরুদ্ধে।
সূত্রের খবর, ওই আরটি গাড়িতে চেপেই টহলদারি পুলিসের দলটি হাজির হয় আনিসের বাড়িতে। আরটি গাড়ি কোন এলাকায় টহলদারিতে যাচ্ছে, তার জিডি এন্ট্রি করতে হয় থানায়। সেই এন্ট্রি দেখেই সংশ্লিষ্ট গাড়িটির ‘লোকেশন’ নির্ধারণ করেছেন তদন্তকারীরা। তদন্তে জানা গিয়েছে, হোমগার্ড কাশীনাথ ও সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম সোজা আনিসদের বাড়ির উপরে উঠে যান। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই সিভিক। বাকিরা বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। পুলিসের সঙ্গে আনিসের বাবার বাদানুবাদ হচ্ছিল। তাতে ঘুম ভেঙে যায় ছাত্রনেতার। তিনি দ্রুত ছাদের নির্মীয়মাণ ঘরে উঠে যান। সিভিক ও হোমাগার্ড তাঁকে ধাওয়া করেন। সিট সূত্রের খবর, তাঁদের হাত থেকে বাঁচতেই রেইন পাইপ বেয়ে নামতে যান আনিস। তখনই হাত ফস্কে নীচে পড়ে যান তিনি। তাতেই তাঁর মাথায় আঘাত লাগে। শরীরের নীচের অংশ ভেঙে যায়। বুধবার ডিজি মনোজ মালব্য জানিয়েছেন, ‘ঘটনায় দুই অভিযুক্তের যোগ মেলার পরই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ ১৫ দিনের মধ্যে যাবতীয় তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদী। তদন্তে সহযোগিতা করার জন্য আনিসের পরিবারকে অনুরোধ করেছেন ডিজি।