করোনার গুজবে বেওয়ারিশ লাশ পোড়াতে বাধা, উত্তপ্ত রাজনীতি

করোনার গুজবে পুরসভার চুল্লিতে বেওয়ারিশ লাশ পোড়াতে বাধা স্থানীয়দের।

June 12, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

করোনার গুজবে পুরসভার চুল্লিতে বেওয়ারিশ লাশ পোড়াতে বাধা স্থানীয়দের। তা নিয়ে বিক্ষোভ, ভাঙচুর, পুরকর্মীদের মারধর— কোনও কিছুই বাদ গেল না। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের মাথাচাড়া দিল রাজনীতি। তাতে জড়িয়ে পড়লেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, দিলীপ ঘোষ এবং সুজন চক্রবর্তীরা। সরকারের তরফে অবশ্য সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এগুলি সবই বেওয়ারিশ লাশ। কোনও দাবিদার না-থাকায় প্রথা মেনেই দেহগুলি গড়িয়া শ্মশানে দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর অভিযোগে একজনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে কলকাতা পুলিশ। তার আগে বৃহস্পতিবার সকালেই এনআরএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানান যে, ১৪টি অজ্ঞাতপরিচয় মৃতদেহ কলকাতা পুরসভাকে দাহ করার জন্য দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে কোনও করোনা আক্রান্ত রোগীর দেহ ছিল না। বেওয়ারিশ লাশকে করোনা-আক্রান্ত বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানোর জন্য পুলিশকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে চিঠিও দেন হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়।

বেওয়ারিশ লাশ

সরকারি সূত্রের খবর, বুধবার রাতে গড়িয়া মহাশ্মশানে এনআরএস পুলিশ মর্গের বেওয়ারিশ লাশ পোড়ানোকে কেন্দ্র করেই এই গোলমালের সূত্রপাত। কলকাতা পুরসভার নিযুক্ত ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা মোট ১৩টি বেওয়ারিশ লাশ নিয়ে শ্মশানে পোড়াতে যান। তার মধ্যেই গুজব রটে যায়, করোনাতে মৃত্যুর পর মৃতদেহগুলি গোপনে পোড়াতে আনা হয়েছে। স্থানীয় মানুষজন শ্মশানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা দাবি তোলেন, এ রকম জনবহুল এলাকায় করোনা রোগীদের মৃতদেহ পোড়ানো যাবে না। এমনকী, শ্মশানের দরজাও বন্ধ করে বিক্ষোভকারীরা দেন। যে সব কর্মীরা মৃতদেহগুলি সৎকার করতে এসেছিলেন, তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত লাশগুলিকে ভ্যানে তুলে এনআরএস পুলিশ মর্গে রেখে আসতে বাধ্য হন ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। এর পরই একটি ভিডিয়ো ক্লিপিংস সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে দেখা যাচ্ছে, কতগুলি পচাগলা, উলঙ্গ মানুষের লাশ লোহার হুক দিয়ে টেনে একটি সাদা ভ্যানে তোলা হচ্ছে। ছবিটি দেখিয়ে কেউ কেউ দাবি করেন, এগুলি আসলে করোনা রোগীদের লাশ। এর পরই চারিদিকে হইচই পড়ে যায়। ভিডিও-র সত্যতা যাচাই না-করেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় টুইট করে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। লেখেন, ‘যে ভাবে মৃতদেহগুলি দাহকার্য করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তা অবর্ণনীয় এবং অসংবেদনশীল। এই ঘটনায় আমি ব্যথিত। রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।’ বিকেলে আবার টুইট করে রাজ্যপাল জানান, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে তিনি এ বিষয়ে জবাব পেয়েছেন। সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহ দাহ করা হবে বলেও তাঁকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব।

এর মাঝে আসরে নামে বিজেপিও। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে অভিযোগ তোলেন, ‘দেহগুলি অ্যাসিড দিয়ে সব পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে চেনা না যায়। চিকিৎসার অভাবে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মৃতদেহের প্রতি এই ব্যবহার! মৃতদেহের তালিকা মানুষকে জানানো উচিত। মেয়রকে দায় নিতে হবে।’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও বলেন, ‘এই ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য অবিলম্বে প্রকাশ করুক পুরসভা। না হলে জনমানসে সন্দেহ থাকবে।’

পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের নির্দেশেই দেহগুলি গড়িয়া শ্মশানে পোড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ঠিক ছিল, ৪ নম্বর ইলেকট্রিক চুল্লিতে দেহগুলি পোড়ানো হবে। এ নিয়ে যাতে অহেতুক আতঙ্ক না-ছড়ায়, তার জন্য সিপিএমের ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটরকে আগাম জানানো হয়েছিল। পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশেই বেওয়ারিশ লাশগুলি গড়িয়া শ্মশানে পোড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এদিন ফিরহাদ বলেন, ‘কী ঘটেছে তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। যেহেতু ধাপায় এখন বেওয়ারিশ লাশ পোড়ানো বন্ধ, তাই গড়িয়া মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এগুলোর একটাও করোনা-আক্রান্ত রোগীর দেহ নয়।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen