করোনার ঠেলায় থমকে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কাজ
শ্রমিক সমস্যায় ধীর গতিতে চলছে সেবক-রংপো রেলপথের কাজ
করোনার ঠেলায় থমকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্প।
দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ভিনরাজ্য থেকে যেমন এ রাজ্যের শ্রমিকেরা ঘরে ফিরে এসেছেন। ঠিক তেমনই উত্তরবঙ্গে রেল, পূর্ত, সড়ক, বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যুক্ত শ্রমিকেরাও নিজেদের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন তুলে দিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ ফের শুরুর নির্দেশ দিলেও মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিকের অভাব।
রাস্তা, বাঁধ, নিকাশি নালা, বাড়িঘর তৈরির জন্য স্থানীয় শ্রমিক দিয়েই কাজ চালানো যায়। কিন্তু যেখানে দক্ষ শ্রমিক প্রয়োজন, সেই সমস্ত প্রকল্পে জটিলতা দেখা দিয়েছে। উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সেবক-রংপো রেলপথ। এটি সম্পূর্ণ হলেই রংপো থেকে গ্যাংটক এবং সেখান থেকে নাথুলা পর্যন্ত লাইন পাতার কাজ শুরু হবে। নানা কারণে গত এক দশক ধরে সেবক-রংপোর কাজ খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। এ বার লকডাউন ফের গভীর খাদে ফেলে দিয়েছে প্রকল্পটিকে।

ওই রেল প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল পাহাড় কেটে টানেল তৈরি করা। এই কাজে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দক্ষ কারিগর, ঠিকাদারদের আনা হয়েছিল। লকডাউনে অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। ফলে প্রকল্পের কাজে গতি আনা সম্ভব হচ্ছে না বলে খেদ প্রকাশ করেছেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানির (ইরকন) প্রজেক্ট ডিরেক্টর টি টি ভুটিয়া। তিনি বলেন, ‘লকডাউন ওঠার পর আমরা কাজে নেমেছি বটে, তবে শ্রমিক সমস্যা ভোগাচ্ছে। ধীর গতিতে কাজ চলছে।’
প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প ধীর লয়ে এগোলে সময় যেমন বেশি লাগবে, তেমনই খরচ বেড়ে যাবে। তবে ব্যয়ভার নয়, আপাতত শ্রমিক সমস্যা মেটানোই প্রাথমিক লক্ষ্য হিসাবে নিয়েছেন ইরকনের কর্তারা।
মংপুতে রেলের টানেল তৈরির কাজ করছে ঠিকাদারি সংস্থা এবিসিএল। সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জীব সিং বলেন, ‘পাহাড় কেটে টানেল তৈরি সহজ কাজ নয়। দক্ষ শ্রমিক ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। লকডাউনে শ্রমিকেরা অনেকেই ফিরে গিয়েছেন। এখন তাঁরা না-ফেরায় কাজে অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়।’
কেবল ইরকন নয়, শ্রমিক সমস্যায় পড়েছেন জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিগম, পাওয়ার গ্রিড এবং জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষও। সড়ক কর্তৃপক্ষ রাজ্যের পূর্ত দপ্তরের মতো রাস্তা তৈরি করে না। ভারী যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কয়েক মাসে কয়েকশো কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করে ফেলতে পারে। ওই সংস্থার কাজেও গতি নেই শ্রমিক সমস্যার জেরে। বর্তমানে স্থানীয় শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে কোনও রকমে কাজ চালানো হচ্ছে।
শ্রমিক সমস্যায় জেরবার শিলিগুড়ির ছোট, মাঝারি শিল্পও। শিলিগুড়ি ফুড পার্কের একটি বিস্কুট কারখানার প্রায় চল্লিশ শতাংশ শ্রমিক লকডাউনে ফিরে গিয়েছেন। ওই শ্রমিকেরা ফিরে না-আসায় সংস্থাটি উৎপাদন বাড়াতে পারছে না। শিলিগুড়ি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলেন, ‘দক্ষ শ্রমিক ফিরে গেলে উৎপাদন ব্যাহত হবেই। আমরা চেষ্টা করছি যাতে এই সমস্যা মিটিয়ে ফের উৎপাদনে গতি আনা যায়।’
সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে চা বাগান ছাড়া অন্যত্র শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে কোনও তথ্য নেই। ভিনরাজ্যে কতজন শ্রমিক যান, অথবা উত্তরবঙ্গে কতজন শ্রমিক বাইরের রাজ্য থেকে কাজ করতে আসেন তাঁর কোনও তথ্য স্থানীয় শ্রম দপ্তরের কর্তাদের কাছে নেই। অথচ আইন আছে।
শিল্প সংস্থা এবং ঠিকাদার সংস্থাকে এ জন্য শ্রম দপ্তরে লাইসেন্স চেয়ে আবেদন করতে হয়। শ্রম দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা যে ভিনরাজ্য থেকে যেমন শ্রমিকেরা আমাদের রাজ্যে ফিরেছেন, তেমনই ভিনরাজ্যের শ্রমিকেরাও আমাদের রাজ্য থেকে ফিরে গিয়েছেন। তার প্রভাব উৎপাদনে পড়বেই।’