অদূর ভবিষ্যতে আয়করে মিলবে না কোনওরকম ছাড়, জানাল মোদী সরকার
ক্রমেই আয়করে ছাড় ব্যবস্থা সম্পূর্ণ তুলে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। অদূর ভবিষ্যতে আয়করে কোনওরকম ছাড়ই মিলবে না। করোনাকালে জীবিকা-সঙ্কট সত্ত্বেও মোদী সরকার পরপর দু’বছর আয়করে সামান্যতম সুরাহা দেয়নি মধ্যবিত্তকে। ভাবা হয়েছিল, আয়করে এবার বড় ছাড় মিলবে। কিন্তু চরম হতাশ হতে হয়েছে করদাতাদের। আর ভবিষ্যতেও যে আয়করে বিশেষ কোনও ছাড় মিলবে না, বরং করছাড় প্রক্রিয়াই সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হবে, সেকথা সোমবার স্পষ্ট জানিয়ে দিল মোদী সরকার। বাজেট নিয়ে দেশের বিভিন্ন বড় শহরে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বৈঠক করে চলেছেন। বৈঠকের লক্ষ্য, শিল্প ও বাণিজ্যমহলের বাজেট প্রতিক্রিয়া জানা। শিল্পপতিদের ক্ষোভবিক্ষোভ ও প্রস্তাব শোনা। সরাসরি অর্থমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে শিল্পমহলের আলাপচারিতার আয়োজন চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।
ওই কর্মসূচির তালিকায় সোমবার ছিল চেন্নাইয়ের শিল্পহমলের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক। সেখানেই এক শিল্পপরিচালক বিমাক্ষেত্রে আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও বেশি প্রিমিয়ামে করছাড়ের আবেদন করেন। অ্যাপোলো সংস্থার পরিচালক সুনীতা রেড্ডি বলেন, বিমাক্ষেত্রে করছাড়ের সুবিধা এখনও অনেক কম। বিশেষ করে স্বাস্থ্যবিমা ক্ষেত্রে। বয়স্ক মানুষের জন্য যাতে আরও বেশি বিমা করাতে পারে দেশবাসী, সেই লক্ষ্যে প্রিমিয়ামের উপর করছাড়ের সীমা বৃদ্ধি করার দাবি ওঠে। অ্যাপোলো কর্ত্রীর ওই আবেদনকে উড়িয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রকের রাজস্ব সচিব তরুণ বাজাজ বললেন, আপনি এমন সময় এই দাবি করছেন, যখন আমরা করছাড় ব্যবস্থাটাই তুলে দেওয়ার পথে হাঁটছি। আগামীদিনে কিন্তু পুরনো করছাড় প্রক্রিয়া আর থাকবে না।
আয়করে দুটি ব্যবস্থা চালু হয়েছে কয়েকবছর আগে থেকেই। নতুন আয়কর প্রক্রিয়ায় কোনও করছাড় নেই। তবে এখানে করের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং কম হারে আয়কর দেওয়ার সুবিধা পাওয়া যাবে, কিন্তু কোনওরকম ছাড় নেওয়া যাবে না। এই পথই আগামীদিনে স্থায়ীভাবে থাকবে। অর্থাৎ দুরকম রীতিতে আয়কর প্রদান ব্যবস্থা আর থাকছে না। রাজস্ব সচিব বলেছেন, এখন যতগুলি আয়কর ধাপ আছে, ভবিষ্যতে সেই ধাপ (ট্যাক্স স্ল্যাব) আরও বাড়ানো হবে। তাঁর আশ্বাস, এভাবে আয়কর হার কমে যাবে। অর্থাৎ মানুষের আয়কর কম দিতে হবে।
রাজস্ব সচিব এই আশ্বাস দিলেও সংশয় তৈরি হয়েছে, এভাবে আদতে আরও মানুষকে আয়করের অধীনে নিয়ে আসাই প্রধান লক্ষ্য সরকারের। বাজেটে এবং বাজেটের আগে ও পরে সরকার ক্রমান্বয়ে বলেছে, বর্তমানে আয়করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। আয়কর দেয় না, অথচ দেওয়া উচিত, এরকম মানুষকে আরও বেশি করে চিহ্নিত করে নিয়ে আসতে হবে করকাঠামোয়। সুতরাং এখন যারা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন কিংবা ৮০ সি, ৮০ ডি ধারায় কর প্রদানের আওতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিয়ে চলছে, তাদের করের আওতায় নিয়ে আসাই সরকারের উদ্দেশ্য। তারই সঙ্গে করছাড় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়াই লক্ষ্য।