ভারতীয়দের উদ্ধারে দিশাহীন মোদী, চলছে শুধু ফটো সেশন!
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ছাত্রছাত্রী ও কর্মরত ভারতীয় নাগরিক ইউক্রেনের তিনটি সীমান্তে আটকে। একজন পড়ুয়ার মৃত্যু রাশিয়ার গোলাবর্ষণে। আর এই পরিস্থিতিতে ইউক্রেন ইস্যুতে চাপ বাড়ছে নরেন্দ্র মোদীর উপর। বিরোধীরা প্রশ্ন করছে, ভারতীয়দের অনেক আগে থেকেই কেন নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়নি? কেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আন্দাজ করতে ব্যর্থ কেন্দ্র? কেন মৃত্যুপুরীতে হাজার হাজার নাগরিককে এমন চরম বিপদে ঠেলে দেওয়া হয়েছে? গত কয়েকদিন ধরেই ইউক্রেন ফেরত ফ্লাইট ভারতে ল্যান্ডিং করার পর রীতিমতো ফটো সেশন করেছেন মোদডঃ সরকারের মন্ত্রীরা। পীযূষ গোয়েল, মুখতার আব্বাস নাকভি, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ারা এয়ারক্র্যাফ্টে ঢুকে ক্যামেরার সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন।
কিন্তু মঙ্গলবারই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক বুঝতে পারে, সংঘাত বড়সড় আকার নিতে চলেছে। কারণ, ইতালি, রোমানিয়া, পোল্যান্ড ইতিমধ্যেই সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছে। আবার ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ দখলে রুশ বাহিনী শুরু করেছে তীব্র গোলাবর্ষণ। তারপর টনক নড়েছে কেন্দ্রের। তড়িঘড়ি বিদেশ মন্ত্রক অ্যালার্ট জারি করেছে, যেভাবে হোক মঙ্গলবারের মধ্যে ইউক্রেন ছেড়ে বেরিয়ে আসুক সব ভারতীয়। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব? ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে আটকে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী। তাঁদের অভিযোগ, ৭২ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে, তাদের সীমান্ত পেরতে দেওয়া হচ্ছে না। রাশিয়া ও ইউক্রেন কোনও পক্ষই বিদেশিদের নিরাপদে বেরিয়ে আসার সুযোগই দিচ্ছে না। এমনকী, ইউক্রেনের সীমান্ত বাহিনী ভারতীয়দের উপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। জল, খাবার শেষ। প্রবল ঠান্ডায় কঁাপছেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে দেশে ফেরার কাতর আবেদন জানাচ্ছেন। তঁারা বলছেন, ভারতীয় দূতাবাসের তরফে উপযুক্ত সাহায্য মিলছে না। ফোন করেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না দূতাবাসের সঙ্গে। এক পড়ুয়ার ক্ষোভ, ‘এভাবে কি আমাদের মৃতদেহ ফেরাতে চাইছে সরকার?’ এসবের মধ্যেই খবর আসে, খারকিভে রেল স্টেশনে যাওয়ার পথে রুশ গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন ভারতীয় ছাত্র। তাতে মোদি সরকার প্রবল চাপে। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন চতুর্থ দফার বৈঠক করেন। চাপে পড়ে এতদিনে উদ্ধারকাজে বায়ুসেনাকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গোল্ডমাস্টার সি-১৭ ইউক্রেন সংলগ্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাহুল গান্ধী মঙ্গলবারও সরকারের উপর চাপ বাড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যেন সময় নষ্ট না করে অবিলম্বে ভারতীয়দের উদ্ধার করে।’ তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহা বলেছেন, ‘উদ্ধারের প্রচার ভারত সরকার এমনভাবে করছে, যেন আগে এরকম কখনও হয়নি।’ বিজেপি এমপি সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর তোপ, ‘ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়াভাবে এই ধ্বংসলীলা বন্ধ করতে বলার সাহস নরেন্দ্র মোদির হবে?’ বিরোধীদের পক্ষ থেকে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। প্রশ্ন এখন একটাই, একজন ভারতীয় এভাবে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে প্রাণ দিল। এখনও ভারত নীরব থাকবে?