টুইটার থেকে সাংবাদিক বৈঠক – আবার রাজ্যপাল-তৃণমূল দ্বৈরথ
তৃণমূলের সর্বাত্মক তোপের মুখে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রথমে টুইটারে আক্রমণ সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। তার পর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে রাজ্যপালের তীব্র সমালোচনায় তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েন। গড়িয়ার শ্মশান-কাণ্ড নিয়ে পর পর বেশ কয়েক দিন রাজ্যপাল আক্রমণাত্মক মন্তব্য করছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই শনিবার এমন সম্মিলিত তোপ তৃণমূলের তরফ থেকে। রাজ্যপালকে এ দিন ‘বিজেপি মুখপাত্র’ এবং ‘মনোনীত ললিপপ’ বলে কটাক্ষ করেছেন ডেরেক।
মহুয়া মৈত্রের ‘পচা আপেল’ মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যপাল এ দিন তৃণমূলের অন্দরে ‘যোগ্য নেতা-নেত্রীদের বন্দিদশা’ নিয়ে খোঁচা দেন। রাজ্যপালের সেই টুইট সামনে আসার পরেই জবাব দেন মহুয়া। ধনখড়ের উদ্দেশে তাঁর টুইট, ‘‘আঙ্কলজি, তিনটি বিষয়— এক: বিজেপি নেতা নির্বাচন করে, কার হাতে কতটা রক্তের দাগ আছে দেখে। তৃণমূল কঠোর পরিশ্রমকে পুরস্কৃত করে। দুই: আইনজীবী হিসেবে আপনার কেরিয়ার বিশেষ উজ্জ্বল নয়। যত দিন রাজ্যপাল রয়েছেন, রাজভবনের গরিমাটুকু অন্তত বজায় রাখার চেষ্টা করুন। তিন: পরবর্তী ভোটে আপনি রাজস্থান থেকে লড়তেই পারেন। নিজেকে তার জন্য ফিট রাখুন।’’
ধনখড়ের উদ্দেশে পরবর্তী তোপ তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের। এ বার রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে। ডেরেক অবশ্য জানিয়ে দেন, রাজ্যপালের নিরন্তর আক্রমণের জবাব দিয়ে তাঁর গুরুত্ব বাড়ানোর অভিপ্রায় তৃণমূল নেতৃত্বের ছিল না। কিন্তু রাজ্যপাল যে পর্যায়ে আক্রমণ নামিয়ে এনেছেন, তার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই এই সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছে। রাজ্যপালকে তীব্র আক্রমণ করে ডেরেক বলেন, ‘‘রাজভবনে যিনি থাকছেন, তিনি বিজেপি এক জন মুখপাত্র।’’
কেন্দ্রীয় দল পশ্চিমবঙ্গে এসে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসা পরিকাঠামোর যে ভূয়সী প্রশংসা যে করে গিয়েছে, সে কথা এ দিন মনে করিয়ে দেন ডেরেক। রাজ্য সরকারের এই ইতিবাচক ভূমিকার প্রশংসা রাজ্যপাল কেন কখনও করেন না, সে প্রশ্নও তোলেন।
গড়িয়ায় শ্মশানে মৃতদেহ টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলার যে দৃশ্য নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে চলেছেন ধনখড়, সে রকম এমনকি তার চেয়েও ভয়ানক দৃশ্য উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক বিজেপিশাসিত রাজ্য থেকেও সামনে এসেছে বলে ডেরেক এ দিন দাবি করেন। ধনখড় কেন সে সব বিষয় নিয়ে মুখ খুলছেন না, প্রশ্ন তৃণমূল মুখপাত্রের।
ধনখড়কে আক্রমণ করে ডেরেক এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজভবনের বাসিন্দা কোনও রাখঢাক না-করে একেবারে খোলাখুলি বিজেপি মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে শুরু করেছেন।’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বার বার রাজ্যপালের আক্রমণের প্রসঙ্গ টেনে ডেরেক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী হলেন এই রাজ্যের ১০ কোটি মানুষের প্রিয় এবং তিনি বাংলার মানুষের দ্বারা নির্বাচিত। আর রাজ্যপাল হলেন এক জন মনোনীত ললিপপ।’’
সঙ্ঘাতের সূত্রপাত, গড়িয়া শশ্মান-কাণ্ড নিয়ে ধারাবাহিক মন্তব্যের জবাবে শুক্রবার কলকাতা পুলিশের একটি টুইটকে তুলে ধরে মহুয়ায় মন্তব্য। তিনি টুইটারে লেখেন, ‘রাজ্য সরকার যখন কোভিড পরিস্থিতি, আম্পান এবং পরিযায়ীদের (শ্রমিক) সমস্যার মোকাবিলা করছে, রাজ্যপাল তখন পিছন থেকে বিজেপির দেওয়া তির ছুড়ছেন। পচা আপেল গাছ থেকে বেশি দূরে পড়ে না।’
রাজ্যপাল এ দিন তার পাল্টা টুইট করেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘মহুয়া মৈত্র তাঁর নিজের সরকারের বিরুদ্ধে যে ধারালো তীরগুলি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ছুড়েছিলেন, সেগুলি ঘাতক ছিল। যা আমাদের পঞ্চায়েতের পুকুর চুরি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কাটমানির কথা আবার মনে করিয়েছে। যা সর্বত্র বিরাজমান।’’ শুধু তাই নয়, কয়েক দিন আগে সোশ্যাল মিডিয়া পঞ্চায়েতের দুর্নীতি সম্পর্কে মহুয়ার মন্তব্যকেও হাতিয়ার করেন রাজ্যপাল। তাঁর টুইট, ‘‘পঞ্চায়েতের দুর্নীতি সামনে এনে নিজে (মহুয়া) এখন বেকায়দায় পড়েছেন। আপাদমস্তক চুরি, দুর্নীতিতে ডুবে থাকা পঞ্চায়েতের চুরি সকলের নজরে এনে এবার এমবি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-এর অনুগ্রহ পেতে চাইছেন। রাজ্যপালকে আক্রমণ কি সেজন্য? তবে এমন অসহায় অবস্থায় আপনি একা নন, আপনার মতো যোগ্য নেতা-নেত্রীদের বন্দিদশা দেখে অবাক হই।’’
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া কিছুদিন আগে পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে কাজ না-করা এবং দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন। আম্পান (প্রকৃত উমপুন) ঘূর্ণঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের উদ্দেশে ভিডিয়ো-বার্তায় তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি এসে বলে, দু’হাজার টাকা দাও, তাহ লে তোমার নাম নথিভুক্ত করব, একটা পয়সাও দেবেন না।’’ পাশাপাশি, পঞ্চায়েত গুলির বিরুদ্ধে উন্নয়নের টাকা সদ্ব্যবহার করতে না-পারার অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি। নদিয়া জেলা তৃণমূলের কয়েক জন নেতা ও পঞ্চায়েত প্রতিনিধি প্রকাশ্যে মহুয়ার মন্তব্যের সমালোচনা করেন। দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশও সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। মহুয়ার আক্রমণের জবাবে তাঁর সেই মন্তব্যের অবতারণা করেই এ দিন তৃণমূলের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে পড়লেন ধনখড়।