রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে কলকাতা বইমেলায় গান্ধীজির ছবি এঁকে কি বার্তা দিলেন রুশ শিল্পী?
তাঁর জন্মভূমি রাশিয়ার আগ্রাসনে থরহরিকম্প গোটা বিশ্ব। আক্রান্ত ইউক্রেনে মৃতের তালিকায় বাদ নেই ভারতীয় ছাত্রও। কিন্তু তিনি শিল্পী। বিশ্বাস করেন গান্ধীজির অহিংসা মন্ত্রে। ভারতীয় ধর্মগ্রন্থের প্রতি অগাধ আস্থা। নাম কনস্ট্যানটাইন পলিকভ। মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) প্রতি তাঁর অনুরক্তি এতটাই যে রাশিয়ার যে শহরে তিনি থাকেন সেই সেন্ট পিটার্সবার্গ এবং রাজধানী মস্কোয় শিল্পীকে সবাই চেনেন ‘গান্ডি’ নামে। বইমেলার রাশিয়া প্যাভিলিয়নে নিজের আঁকা গান্ধীজির ছবি অভ্যাগতদের দেখাচ্ছিলেন পলিকভ। ইংরেজি বলতে পারেন না। রুশ বক্তব্য বাংলা করে বোঝালেন প্যাভিলিয়নের মুখপাত্র দেবস্মিতা মৌলিক। পলিকভ জানেন, মঙ্গলবার গোটা ভারতে শিবরাত্রি উৎসব পালিত হয়েছে। বারাণসীর ঘাট-সহ তাঁর তুলিতে ফুটে উঠেছে তিনটি মহাদেব বিষয়ক মাইথোলজির ছবি। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় নারীর ছবিও এঁকেছেন রুশ শিল্পী। স্টলে আছে দেবী দুর্গার ছবিও।
কলকাতায় রাশিয়ার কনসাল জেনারেল আলেক্সি ইডামকিনের আরজি রাশিয়ার দিকটাও বাঙালি একটু ভেবে দেখুক। কলকাতার সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। মস্কোর আন্তর্জাতিক বইমেলায় প্রচুর বাংলা বই যায়। আবার কলকাতা বইমেলায় রাশিয়া পুরোদমে অংশ নেয়। ইউক্রেনে (Russia Ukraine War) আটক বাঙালি তথা ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের দুর্দশায় ঘোর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। যদিও আলেক্সির ব্যাখ্যা, “কে বলল আমরা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছি! এটা যুদ্ধ নয়, বিশেষ সামরিক অভিযান।”
রাশিয়ার (Russia) স্টলে বিশেষ আকর্ষণ শিল্পী কনস্ট্যানটাইন পলিকভের চিত্র প্রদর্শনী। নজর কাড়ে মহাত্মা গান্ধীর ছবি। শিল্পীর কথায়, “যে কোনও যুদ্ধই বেদনাদায়ক। সীমান্ত হোক শান্তির এবং সহমর্মিতার। আমি ইউক্রেনেও গেছি। একসময় ইউক্রেন ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।” স্টলে ঢোকার মুখেই রয়েছে কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের রুশ ভাষায় অনুদিত ‘আরোগ্য নিকেতন’। দেবস্মিতা জানালেন, মস্কোয় এখন খাদ্য উৎসব চলছে। তা মনে রেখে কলকাতা বইমেলার রাশিয়া স্টলে রাখা হয়েছে সে দেশের বিভিন্ন খাবার।
বইমেলায় (International Kolkata Bookfair 2022) শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগ-সহ বেশ কিছু স্টল উদ্বোধন হয় মঙ্গলবার। প্রাথমিক স্কুলের আদলে তৈরি স্টলের সামনে ‘ফাগুনের মোহনায়’ গানে দেখা গেল আদিবাসী নৃত্য। ঝাড়খণ্ডের চর্যাশ্রম প্রকাশনে সবে ঝাঁট পড়ছিল। লিটল ম্যাগাজিন স্টলগুলির পাশের মাঠে ‘শঙ্খ ঘোষ মঞ্চ’। অনুষ্ঠানহীন মঞ্চে বিশ্রাম নিচ্ছেন ক্লান্ত বইপ্রেমীরা। সামনের মাঠে যেন খাদ্য উৎসব। সাদা ভাত-চিকেন কারি থেকে পাপড়িচাট, ফিশ ফ্রাই, আইসক্রিম, মিষ্টি, সন্দেশ, ডেয়ারি। পিছনে চলছে লাইভ ছবি আঁকা। ন্যাশনাল জুট বোর্ডের স্টলে ‘বইমেলা’ লেখা পাটের ব্যাগ। পশ্চিমবঙ্গ মণ্ডপের সামনে টানা সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলার দুর্গাপুজো (Durga Puja) ইউনেস্কোর সম্মান পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। বইয়ের মাঝে ঝাঁকুনি দেয় আচারের বিপণি। এশিয়াটিক সোসাইটির পিছনে মুক্ত মঞ্চ। নতুন বই উলটে দেখছেন অনেকে। আর আছে সেলফির সুনামি। কে যে কোথায় সেলফি তুলবেন ঠিক নেই। নতুন বইয়ের গন্ধ বা পুরনো বইয়ের নস্ট্যালজিয়া সব মিলিয়েই কলকাতা বইমেলার মেজাজটাই যেন ফুটে উঠল।