যুদ্ধের কথা শুনেছেন, পড়েছেন, আসলে যুদ্ধ কতো ভয়ঙ্কর হতে পারে প্রথম বুঝলেন ঝাড়খণ্ডের ছাত্র আতিফ
এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউক্রেনে আটকে পড়েছিলেন বেশ কিছু ভারতীয়। তারা ধীরে ধীরে দেশে ফিরতে শুরু করলেও আতঙ্ক যেন পিছু ছাড়ছে না। ভারতীয় পড়ুয়ারা এখনও ভুলতে পারছেন না সেই বিভীষকাময় রাতগুলি। আবার অনেকে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশগুলিতে পালিয়ে গিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। কবে ফেরাবে নিজের দেশ।
নিজের এমনই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন রোমানিয়ার শিবিরে আশ্রয় নেওয়া ঝাড়খন্ডের ছাত্র আতিফ আহমেদ। আতিফ যুদ্ধের কথা শুনেছেন। পড়েছেন। কিন্তু, যুদ্ধবিধ্বস্ত শহরে মানুষের অবস্থা কী হয়, তা এই প্রথম বুঝলেন। ইউক্রেনের রাজধানী কিভেই তাদের কলেজ।
গত মঙ্গলবার কাকভোরে যতটা পেরেছেন, মালপত্র নিয়ে অতিফরা প্রায় ৩০ জন বন্ধু একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিলেন। একটাই লক্ষ্য ছিল, ইউক্রেনের সীমান্ত পেরিয়ে অন্য যে কোনও দেশে ঢুকতে যাওয়া।
এখন আতিফ রোমানিয়ার বুখারেস্টের মিলিসান্টি স্টেডিয়ামের শিবিরে। তার সঙ্গে সাত জন বন্ধু। বাকিরা ছিটকে গিয়েছে হাঙ্গেরিতে, পোল্যান্ডে। মঙ্গলবার সকালে সবাই মিলে যখন কিভ রেলস্টেশনে পৌঁছলেন, সেখানে অগুনতি মানুষের ভিড়। সবাই ইউক্রেন ছেড়ে পালাতে চাইছেন। একের পর এক ট্রেন আসছে। ভেড়ার পালের মতো মানুষ উঠছে ট্রেনে। ট্রেনের দরজার মুখে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল হাতে ইউক্রেনের সেনা। পাসপোর্ট দেখে বেছে বেছে শুধু ইউক্রেনীয়দের ট্রেনে তোলা হচ্ছে। অতিফরা উঠতে চাইলে ঠেলে দিচ্ছে দূরে।
কিন্তু তারাও মরিয়া। তখনই বুঝেছিলেন, একসঙ্গে ৩০ জন এক ট্রেনে ওঠা যাবে না। ঠিক করেন, ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে যারা যে ট্রেনে পাবেন, উঠে যাবেন। অতিফরা জনা আটেক বন্ধু এর মধ্যেই একটি ট্রেনের দরজায় ঠেলাঠেলি করে উঠে পড়েছেন। অনেকেরই মালপত্র স্টেশনেই ফেলে আসতে হয়েছে। আগে তো প্রাণ বাঁচুক। প্রথমে ট্রেন, তারপরে বাসে করে রোমানিয়ার সীমান্তে পৌঁছেছেন মঙ্গলবার রাতে। সেখান থেকে বাসে করে স্টেডিয়াম।
এখন বাইরে মাইনাস ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেরনো সম্ভব নয়। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ছুরির ফলার মতো শরীরে এসে বিঁধছে।
তবুও এখন তারা ভাল আছেন। মনে যে ভয়টা চেপে বসেছিল, তা অনেকটাই কেটেছে। কিভে থাকাকালীন, কিভ থেকে রোমানিয়ার পথে মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। চারদিকে অসহায় মানুষের ছোটাছুটি, ট্রেনে ওঠার জন্য মারপিট, খিদের জন্য ছটফটানি, এ এক ভয়াবহ স্মৃতি বয়ে বেড়াতে হবে বাকি জীবন।
এখন যে শেল্টারে আছেন আতিফ, সেখানেও গাদাগাদি ভিড়। শৌচালয়ের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন। তবে, কোনও সমস্যাটাই সমস্যা বলে এখন আর মনে হচ্ছে না তাদের। রোমানিয়ার স্থানীয় প্রশাসন সাহায্য করছে। খাবার দিয়েছে। কম্বল দিয়েছে। গরম জল দিচ্ছে। চকোলেটও দিয়েছে।
ঝাড়খণ্ডে নিজের বাড়িতে যোগাযোগ করে বলেছেন, চিন্তা না করতে। ভারত সরকার দেশে
ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন একথা শুনেছেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত দেশের কোনও অফিসারের দেখা পাননি। আশায় বুক বেঁধে রয়েছে লন একদল যুবক যুবতী।