কোথায় নিরাপত্তা! কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ইউক্রেনে আটকে পড়া পড়ুয়াদের
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনীয় শহর খারকিভ থেকে পেসোচিনের দূরত্ব ১৩ কিলোমিটারও নয়। বাই রোড গাড়িতে খারকিভ থেকে পেসোচিন পৌঁছতে সময় লাগে আধঘণ্টারও কম। নিরাপদ শহর বলে এখানেই সরিয়ে আনা হয়েছে ভারতীয় পড়ুয়াদের। বলা ভাল, তাঁদের নিজেদেরই সরে আসতে হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। সঙ্গী শেখরাপ্পা জ্ঞানগৌদার মর্মান্তিক পরিণতি দেখে। ভারত সরকারের এক জরুরি বার্তা ক্ষণকাল তিষ্ঠনোর সুযোগ দেয়নি পূজা প্রহরাজদের। পড়িমরি লোটাকম্বল নিয়ে পূজারা সরে এসেছেন ‘নিরাপদ’ শহর পেসোচিনে। ভারতীয় এই পড়ুয়ারা ভেবেছিলেন, এখান থেকে তাঁদের উদ্ধার করে নিয়ে যাবে নরেন্দ্র মোদির ‘অপারেশন গঙ্গা’র উড়ান। কিন্তু কোথায় কী! ১৩ কিলোমিটার পথ উজিয়ে পেসোচিনে আসার প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পরেও পূজা প্রহরাজদের কাছে আতঙ্কের ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।
খারকিভের সিটি সেন্টারে খাবার কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে নিহত ভারতীয় ছাত্র নবীন শেখরাপ্পা জ্ঞানগৌরার বন্ধু পূজা প্রহরাজ ইতিমধ্যে খবরের শিরোনামে এসেছেন। পূজা খারকিভ শহরের ভারতীয় পড়ুয়াদের কো-অর্ডিনেটরও। ফলে, নিজের সুরক্ষার থেকেও তাঁর দুশ্চিন্তা খারকিভে মেডিক্যাল পড়তে যাওয়া কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তা।
নরেন্দ্র মোদি সরকার তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছেন না বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন খারকিভে পড়তে যাওয়া ভারতীয় এই ছাত্রী। কেন্দ্রের ভূমিকায় হতাশ হয়ে ‘বিপদে বন্ধু’ সোনু সুদের উদ্দেশে টুইটও করেছিলেন পূজা। সোনুর কাছে তাঁর আর্তি ছিল, ‘আমাদের উদ্ধারের কোনও উপায় আছে কি?’
সেই পূজা প্রহরাজই আবার টুইট করেছেন। শুক্রবার। পেসোচিনের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন। ছবিটি ‘নির্বাক’ করে দেখলে, পড়ুয়াদের বিক্ষিপ্ত জটলা ছাড়া কিছুই ঠাওর হয় না। প্যান করা ক্যামেরার লেন্সে নজরে পড়ে না যুদ্ধের কোনও ক্ষতও। কিন্তু সবাক চিত্রে কানে আসে গোলাবর্ষণ। পূজা আক্ষেপ করে লিখেছেন, এই ভিডিয়ো দেখিয়ে দিচ্ছে আমরা কতটা সুরক্ষিত রয়েছি!
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে মুহুর্মুহু রুশ গোলাবর্ষণ হচ্ছে। হিসেবের ভুলচুকে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র যে পেসোচিনে আছড়ে পড়বে না, সে নিশ্চিয়তা তাঁদের দেবে কে! তাই তথাকথিত ‘নিরাপদ’ পেসোচিনে সরে এসেও দু-পাতা এক করতে পারছেন না ভারতীয় পড়ুয়ারা। পেসোচিনেও পিছু ছাড়ছে না মৃত্যুভয়। প্রতিটা মুহূর্ত তাঁদের কাটছে চরম উত্কণ্ঠায়।
পূজাদের করুণ আর্তি, ‘আমরা ফিরতে চাই। ভারত সরকারের কাছে কি আমাদের স্বর পৌঁছচ্ছে?’ উত্তরের অপেক্ষায়…। মোদির অপারেশন গঙ্গা-র অপেক্ষা অধৈর্য কর তুলছে খারকিভের ভারতীয় পড়ুয়াদের।