ভোট আবহে চাই মোদীর জয়গানের ছবি, ইউক্রেন ফেরতদের বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ বিজেপি নেতাদের
লক্ষ্য একটাই, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জয়গান। যুদ্ধ কিংবা সামরিক অভিযানের প্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড তোলার অভিযোগ আগেও উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্ধারকাজ নিয়েও একই অভিযোগ উঠল। অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগা বঙ্গ বিজেপির কাছে মোদী সরকারের এই সাফল্যগাথা তুলে ধরার নির্দেশ এসেছে দিল্লি থেকে। সূত্রের দাবি, দলের রাজ্য সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর কাছে বৃহস্পতিবার খোদ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর (পিএমও) থেকে ফোন আসে। যুদ্ধক্ষেত্রে আটকে থাকা প্রায় ৩০০ ছাত্রছাত্রীর তালিকা বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্য পার্টির হাতে। বলা হয়েছে, লিস্ট মিলিয়ে সেই পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যান । ইতিমধ্যে বাড়িতে ফেরা পড়ুয়া কিংবা না ফেরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করুন। ছবি তুলুন। আর তারপর সেই ছবি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ‘ট্যাগ’ করে পোস্ট করুন। এমন একটা আবহ তৈরি করতে হবে, যেন প্রধানমন্ত্রীর জন্যই এই উদ্ধার কাজ সম্ভব হল।
বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সহ-সভাপতি মধুছন্দা কর। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। পিএমওর তরফে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। দলের সমস্ত জনপ্রতিনিধি, পদাধিকারী, জেলা সভাপতিদের এই কঠিন সময়ে উৎকণ্ঠায় ভোগা পরিবারগুলির পাশে থাকার নির্দেশ এসেছে দিল্লি থেকে।’ মধুছন্দাদেবী আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলি স্রেফ ভোট চাইতে বাড়ি বাড়ি জনসংযোগ করে। বিজেপি ভিন্ন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।’ এ প্রসঙ্গে দলের এক শীর্ষ রাজ্য নেতা বলেন, ‘এই কাজে রাজ্য বিজেপির কল সেন্টারকে কাজে লাগানো হয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া লিস্ট দেখে দলের কল সেন্টারের কর্মীরা অভিভাবকদের ফোন করছেন। তাঁদের প্রিয়জনদের ফেরাতে মোদি সরকারের নেওয়া উদ্যোগের লম্বা ফিরিস্তি শোনানো হচ্ছে ফোনে।’ ওই নেতার দাবি, বহু ক্ষেত্রেই অভিভাবকরা বিরক্ত হচ্ছেন। তারপর বাড়িতে ফের বিজেপি নেতৃত্ব গিয়ে দেখা করার সময় অভিভাবকদের অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। একইসঙ্গে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতেও অস্বীকার করছেন বহু পরিবার। ওই নেতার দাবি, বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে পিএমও ওয়াকিবহাল নয়। একইসঙ্গে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের দক্ষতা নিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। তবে ছাত্রছাত্রীদের ফিরিয়ে কেন্দ্রের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল হবে, তা নিয়ে কিন্তু সংশয় রয়েছে। মোদি সরকারের এই ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বভাবতই বাংলায় ‘অপারেশন গঙ্গা’র আত্মপ্রচার মসৃণ হবে না, সে ব্যাপারে বঙ্গ বিজেপিই একপ্রকার নিশ্চিত।