২ ঘন্টার মধ্যে ইউক্রেন ছাড়ার নিদান, ভারতীয় দূতাবাসের বিরুদ্ধে বাড়ছে ক্ষোভ
সকাল ১০টা থেকে ১২টা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে ভারতে ফিরতে হলে হাতে এই দু’ঘণ্টাই। হাঙ্গেরিতে ভারতীয় দূতাবাস স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ১৯ মিনিটে টুইট করে এই ফরমান জারি করে দেয়। তাতে সাফ বলা হয়, ‘দূতাবাসের ব্যবস্থাপনার বাইরে যে ছাত্রছাত্রীরা রয়েছেন, তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে হাঙ্গেরি সিটি সেন্টারে পৌঁছে যান। কারণ, অপারেশন গঙ্গার শেষ পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে।’ অর্থাৎ বিষয়টা খুব স্পষ্ট, নিজ দায়িত্বে পৌঁছতে হবে নির্ধারিত পয়েন্টে। এরপর যাঁরা থেকে যাবেন, তাঁদের দায়িত্ব কার?
যুদ্ধের ১১তম দিন। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭৬টি বিমানে করে ১৫ হাজার ৯২০ জন ভারতীয় নাগরিককে ফেরানো। মোদী সরকারের ফিরিস্তির পরিসংখ্যানে ঘাটতি নেই। কিন্তু কতজন ভারতীয় এখনও আটকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে? তার হিসেব কেন্দ্র দিতে পারেনি। সেই হিসেব পেতে ইউক্রেনে আটকে থাকা ভারতীয়দের উদ্দেশে আরও একটি টুইট গিয়েছে। তাতে একটি ফর্ম ধরানো হয়েছে। সরকার বলছে, এই ফর্ম পূরণ করে দ্রুত পাঠাতে হবে। কী আছে তাতে? নাম, পাসপোর্ট নম্বর, ইউক্রেন ও ভারতের ফোন নম্বর, বর্তমান অবস্থানের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে কারা রয়েছেন—এমন সব প্রশ্ন। অর্থাৎ, যাঁরা এই ফর্ম পূরণ করার মতো সময় এবং ইন্টারনেট পাবেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। বাকিরা? নিশ্চুপ কেন্দ্র। কারণ, সেই সংখ্যাটাই যে জানা নেই! এবার প্রশ্ন উঠছে, সবাইকে উদ্ধার করার ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়েই ‘অপারেশন গঙ্গা’র শেষ পর্যায় কীভাবে শুরু হয়ে গেল? সাফাই দেওয়া হচ্ছে, শেষ পর্ব হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের। রবি ও সোমবারের মধ্যে ওই শহর থেকে পাঁচটি বিমান ভারতের উদ্দেশে উড়ে যাবে। আতঙ্কিত ভারতীয়রা—ওই কি শেষ? আসলে সরকার মনে করছে, হাঙ্গেরি সীমান্তের কাছাকাছি উদ্ধারপর্ব সম্পূর্ণ। সত্যিই কি তাই? হিমাঙ্কের নীচে তাপমাত্রা, সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে দিতে বাসের আকাশছোঁয়া দর হাঁকা, বর্ণবিদ্বেষের শিকার হওয়া, কিংবা ইউক্রেনের সেনার অসহযোগিতা… এই সব তথ্য বিবেচনা করা হয়েছে কি? পিসোচিনের এক পড়ুয়া টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘মাথাপিছু সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা করে চাওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পিসোচিন ছাড়ার জন্য এটাই শেষ বাস।’ এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার জানাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টায় পোল্যান্ড ও রোমানিয়া থেকে একটি করে উদ্ধার-বিমান ছাড়বে। পোল্যান্ড থেকে ফিরছেন গুলিতে জখম পড়ুয়া হরজ্যোৎ সিং। কিন্তু তারপরও যাঁরা আটকে? তথ্য অজানা।
এ না হয় হাঙ্গেরি বা পোল্যান্ড সীমান্তের কাছাকাছি থাকা ভারতীয়দের জন্য। এর বাইরেও কিন্তু ইউক্রেন থেকে অনেকেই বেরতে পারেননি। সুমির প্রবল ঠান্ডায় ৭০০’রও বেশি পড়ুয়া এখনও আটকে। এদিনও যুক্তি দেখানো হচ্ছে, রুশ হামলার তীব্রতায় তাঁদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না। রাশিয়া এবং ইউক্রেন সরকারের কাছে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, ভারতীয়দের সেফ প্যাসেজের সুযোগ দিন। সেই কূটনীতি কতটা কাজে দেবে, সে ব্যাপারে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, আগেও যুদ্ধবিরতির দাবির পর লাগাতার হামলা হয়েছে। ঘড়ির কাঁটা এগচ্ছে, আর বাড়ছে ক্ষোভ। উদ্ধারকাজ কোথায়? এটা ট্যাক্সি সার্ভিস। নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছনোর চ্যালেঞ্জ তো পড়ুয়াদেরই নিতে হচ্ছে! তারপর সরকারের বিমানে করে ফেরানোর ব্যবস্থা। ‘সবটাই ভারতের করদাতাদের টাকায়।