বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

সমাজের চিরাচরিত প্রথা ভেঙে, ইতিহাস সৃষ্টিকারী নারীদের গল্প

March 8, 2022 | 4 min read

সমাজ থেকে সংসার সবকিছুর চালিকা শক্তিই নারী, তবুও নানান সময়ে তাঁদের দুর্বল ভেবে খুশী হন কেউ কেউ। মুখে যতই লিঙ্গ সমতার কথা বলা হোক, আদপে তা কতটা মানা হয় তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যায়। কোথাও গিয়ে বারবার সেই নারী-পুরুষ সমতুল্য বিষয়টা সোনার পাথর বাটি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যুগে যুগে এমন এমন মহিলারা এসেছেন যারা প্রথা ভেঙেছেন। সমস্ত ভাবনা চিন্তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন যাঁরা, লিখেছেন নতুন ইতিহাস, তেমনই কয়েক জন ছক ভাঙার কান্ডারীদের খুঁজবে দৃষ্টিভঙ্গি।

গল্পের দেবী চৌধুরাণী হোক বা বাস্তবের রানী রাসমণি, সকলেই সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছেন নারীরা কোন অংশে কম নয়। স্ত্রী-পুরুষ ভেদাভেদ আদপে ভ্রম। আত্মার কোনও লিঙ্গ হয় না। পুরুষদের জন্য বাইরের কাজ, আর মহিলারা কেবল ঘরে থেকে রাঁধবে, বাটবে, সন্তান প্রতিপালন করবে; এই ভাবনাকে বদলে দিতে চায় আজকের সমাজ। বেশিও বা কমও নয়; নারী-পুরুষ সমান সমান। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে গবেষণাগার, খেলার মাঠ থেকে মাঝ আকাশ সর্বত্রই ছক ভেঙেছেন নারীরা।

সমাজ যেগুলোকে তথাকথিত ‘পুরুষের কাজ’ বলে এসেছে এতদিন, সে সব কাজ অনায়াসে করে ফেলেছেন তাঁরা। আজ তেমনই কয়েকজন নারীর গল্প –

১) জি এস লক্ষ্মী :

Former Indian cricketer GS Lakshmi to become first woman referee to oversee  a men's ODI

(আইসিসি-র আন্তর্জাতিক ম্যাচরেফারিদের প্যানেলে প্রথম মহিলা ম্যাচরেফারি)

আইসিসি-র আন্তর্জাতিক ম্যাচরেফারিদের প্যানেলে প্রথম মহিলা ম্যাচরেফারি হিসেবে নির্বাচিত হন ৫১ বছরের লক্ষ্মী। ২০০৮-০৯ সালে মহিলাদের ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচরেফারির ভূমিকা দায়িত্বের সঙ্গে পালন করেন তিনি। ইতিমধ্যে তিনটি ওয়ান ডে ও তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে রেফারি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন লক্ষ্মী। এতদিন এই ম্যাচ রেফারির কাজটি শুধুমাত্র ছেলেদের কাজ বলেই মনে করা হত, সমাজের সেই ধারানাটাকেই বদলে দিলেন লক্ষ্মী।

২) বৃন্দা রাঠি :

(ভারতের প্রথম মহিলা আম্পায়ার)

ক্রিকেট খেলায় পুরুষের প্রাধান্যই বেশি। তাই সেই খেলার বিচারক যে একজন পুরুষ হবেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতদিন এভাবেই চলে আসছিল, কিন্তু সেই ধারণাই বদলে দিলেন ২৯ বছরের বৃন্দা রাঠি। ভারতের প্রথম মহিলা আম্পায়ার তিনি। প্রথমে ক্রিকেটার হিসেবেই শুরু করেন বৃন্দা। পরে সেখান থেকেই বিসিসিআইয়ের দ্বিতীয় স্তরের আম্পায়ারিং পরীক্ষা পাশ করেন। ওই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে উত্তীর্ন হয়েছিলেন বৃন্দা।

৩) গঙ্গাদীপ কউর :

(৩৬০ বছরে রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হওয়া প্রথম ভারতীয় মহিলা)

এবার মাঠ ছেড়ে খানি মস্তিষ্কের দিকে নজর দিই। গঙ্গাদীপ কউর হলেন প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি ৩৬০ বছরে প্রথমবার রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালে বিজ্ঞানী গঙ্গাদীপ কউরকে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির তরফে ফেলো ঘোষণা করা হয়।

৪) পুনিতা অরোরা :

ছবি Unnati Silks

(থ্রি স্টার ব়্যাঙ্ক পাওয়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম মহিলা)

প্রতিটি ক্ষেত্রের মতোই সেনাবাহিনীতেও আজকাল নারীশক্তিরই জয়জয়কার। লেফটেন্যান্ট জেনারেল পুনিতা অরোরা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর প্রথম মহিলা, যিনি থ্রি স্টার ব়্যাঙ্ক পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক। ১৯৬৮ সালে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর আর্মি মেডিক্যাল কোরে কমিশনড হন। মাত্র ২১ বছর বয়সী পুনিতার প্রথম পোস্টিং হয়েছিল ফাতেহনগরে। লেফটেন্যান্ট হিসেবে তিনি সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক নিযুক্ত হন। কর্মজীবনে একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন পুনিতা।

৫) গুঞ্জন সাক্সেনা :

Gunjan Saxena | The incredible success story of the Kargil girl

(যুদ্ধে অংশ নেওয়া ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা পাইলট)

যুদ্ধের ময়দানেও স্বপ্রতিভ নারীরা। ১৯৯৯ সালে ইন্দো-পাক কার্গিল যুদ্ধের সময় নিজের চিতা হেলিকপ্টার উড়িয়ে আহত সেনাদের উদ্ধার করেছিলেন গুঞ্জন সাক্সেনা। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা পাইলট হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন গুঞ্জন। তাঁকে নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে।

৬) নিবেদিতা চৌধুরী :

( মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট কামেত জয়ী ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা অফিসার)

ফ্লাইট লেফট্যান্যান্ট নিবেদিতা চৌধুরী, তিনিই ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম মহিলা অফিসার, মাউন্ট এভারেস্ট ও মাউন্ট কামেত জয় করার কীর্তি রয়েছে তাঁর দখলে।

৭) ভাবনা কান্ত :

Bhawana Kanth to become the 1st woman fighter pilot to take part in R Day  parade

(ভারতীয় বায়ুসেনার প্রথম যুদ্ধ বিমানচালক)

ভারতীয় বায়ুসেনার মহিলা অফিসারেরা কেবল হেলিকপ্টার ও ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফ্ট চালাতে পারতেন। যুদ্ধবিমান ছিল ছেলেদের জন্য। যুদ্ধ বিমান চালিয়ে সেই প্রথাই ভেঙেছেন ভাবনা কান্ত। তিনিই ভারতের প্রথম বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান চালক। তাঁর সঙ্গেই ভারতীয় বায়ুসেনা পেয়েছিল আরও দুই যুদ্ধবিমান চালককে। ভাবনা কান্ত, অবনী চতুর্বেদী ও মোহনা সিং; এই বিখ্যাত ত্রয়ী ‘ফেমাস ট্রায়ো অব ২০১৬’ নামে পরিচিত।

৮) শান্তি টিগ্গা :

(ভারতের প্রথম মহিলা জওয়ান)

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে মহিলাদের নেওয়া হত না। ভারতীয় সমাজের বদ্ধমূল সেই ভেঙে ফেলেছিলেন শান্তি টিগ্গা। মাত্র ৩৫ বছর সেইবয়সেই ভারতীয় সেনার সশস্ত্র জওয়ান নির্বাচিত হন শান্তি। রাষ্ট্রপতি পুরষ্কারেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। ভারতীয় সেনায় মেয়েদের যোগদানের পথিকৃৎ হলেন শান্তি।

সমাজে চলে আসা কোন কিছুকে ভাঙা সহজ নয়, প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে স্বপ্ন ছোঁয়াও বড় কঠিন। তবে কেউ কেউ স্বপ্নকে ছুঁতে পারেন, সব বাধা অতিক্রম করে হয়ে ওঠেন সমাজ বদলের কান্ডারি। তাঁরাই আগামীর প্রেরণা। অনেকেই তাঁদের দেখেই সাহস পেয়ে এগিয়ে আসেন। সাহস হয়ে ওঠা সেই প্রথমাদের কুর্নিশ জানায় দৃষ্টিভঙ্গি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Indian society, #Womens Day 2022

আরো দেখুন